চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিশ্বজয়ী জিদান ও জুলেরিমের আক্ষেপ ঘোচানো বিশ্বকাপ

ফিরে দেখা: বিশ্বকাপ-১৯৯৮

সপ্তাহ দুই গড়ালেই বাজবে রাশিয়া বিশ্বকাপের বাঁশি। ২০টি বিশ্বকাপ পেরিয়ে এসেছে ফুটবল মহাযজ্ঞের যাত্রাপথ। প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উরুগুয়ে। আগের আসরগুলোর পরতে পরতে ঠাসা রোমাঞ্চকর নানা গল্প। চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের ধারাবাহিকভাবে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে ইতিহাসের ধূলিজমা সেসব পাতায়। আজ থাকছে ফ্রান্স বিশ্বকাপ ১৯৯৮’র কথা-

ফিফা বিশ্বকাপের জনক ছিলেন জুলেরিমে! ভদ্রলোক ফ্রান্সের নাগরিক। ফিফার প্রথম সভাপতি। অনেক কাঠখর পুড়িয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তাই বিশ্বযজ্ঞের জন্মদাতা দেশ হিসেবে ফ্রান্সকেই জানে বিশ্ববাসী। কিন্তু ফরাসিদের মনে হাহাকার। এত বড় আসরের জন্ম দেয়া আর মিশেল প্লাতিনির মতো কিংবদন্তি পাওয়ার পরও যে সোনালী ট্রফিটা ফ্রেঞ্চদের শোকেসে ধরা দিচ্ছিল না!

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

১৯৯৮ সালে ৬০ বছর পর বিশ্বকাপ সেবার ফিরল জুলেরিমের জন্মভূমিতে। সঙ্গে ৩২ দলের নতুন এক ফরম্যাট নিয়ে। সেই ফরম্যাট যেন সৌভাগ্য বয়ে আনলো স্বাগতিক ফ্রান্সের জন্য। সঙ্গে আগের বিশ্বকাপ না খেলতে পারার একবুক জ্বালা মেটাল। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সেবার আর বিশ্বকাপকে অন্যকারও হাতে যেতে দেয়নি ফরাসিরা। দেননি জুলেরিমের দেশের জিনেদিন জিদান নামের এক কিংবদন্তি।

ফিরে দেখা: বিশ্বকাপ-১৯৩০বিশ্বকাপ-১৯৩৪বিশ্বকাপ-১৯৩৮বিশ্বকাপ-১৯৫০, বিশ্বকাপ-১৯৫৪,

বিশ্বকাপ-১৯৫৮, বিশ্বকাপ-১৯৬২বিশ্বকাপ-১৯৬৬বিশ্বকাপ ১৯৭০বিশ্বকাপ-১৯৭৪,

বিশ্বকাপ-১৯৭৮বিশ্বকাপ-১৯৮২বিশ্বকাপ-১৯৮৬বিশ্বকাপ-১৯৯০বিশ্বকাপ-১৯৯৪

ফ্রান্স আসরেও বরাবরের মতো ফেভারিট ছিল ব্রাজিল। যার মূলে ছিলেন রোনাল্ডো। বিশ্বকাপের আগেই দুবার বিশ্বসেরা ফুটবলার হওয়ায় সবার দৃষ্টি ছিল ফেনোমেননের দিকে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে স্কোয়াডে থাকলেও খেলা হয়নি। কেনো তিনি বিশ্বসেরা সেটা জানান দিতে যেন ফ্রান্স আসরকেই বেছে নিলেন ‘দ্যা ফেনোমেনন’।

নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই তৃতীয় হয়ে চমকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া

মূল স্ট্রাইকার রোমারিও চোটে থাকায় দলের দায়িত্ব তুলে নেন কাঁধে। মরোক্কো ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের দুই ম্যাচে সহজ জয়ে ছিল তার অবদান। তৃতীয় ম্যাচে অবশ্য ভালো ধাক্কা খেয়েছিল সেলেসাওরা। নরওয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় তখনকার বিশ্বসেরারা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ফাইনালের টিকিট ঠিকই অর্জন করে ব্রাজিল।

শিরোপার মঞ্চে বাজিমাত করে স্বাগতিক ফ্রান্স। তার আগে গ্রুপপর্বে সাউথ আফ্রিকা, সৌদি আরব ও ডেনমার্ককে হারিয়ে পরের রাউন্ডে ঠিকঠাক মতোই পৌঁছে যায় দিদিয়ের দেশমের দল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে সৌদি ম্যাচের সময়। অতিথি খেলোয়াড় ফুয়াদ আমিনকে লাথি মেরে লাল-কার্ড দেখেন দলের মূল তারকা জিনেদিন জিদান। ফলে তাকে ছাড়াই দ্বিতীয় রাউন্ড খেলতে হয়েছে ফ্রান্সকে।

গ্রুপপর্ব থেকে স্পেনের বিদায় ছিল সেই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় অঘটন। নাইজেরিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হারের পর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রতেই বিদায় নিশ্চিত হয় লা রোজাদের। শেষ ম্যাচে বুলগেরিয়াকে ৬-১ গোলে হারালেও ভাগ্যে শিকে ছেড়েনি স্পেনের।

১৯৯৮ বিশ্বকাপকে স্মরণ করতে চাইলে স্মরণে আনতে হবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচটিও। রাজনৈতিক কারণে দুই দেশের সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। সেই দ্বন্দ্বের উত্তাপটা ছড়াল না ফুটবল মাঠে। ম্যাচ শুরুর আগে ফুল বিনিময় আর সৌজন্যমূলক ছবি তুলতে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিল দুই দলই। পরে ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল ইরান।

শান্তির বার্তা ছড়ানো ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের আগে

যা কিছু আলোচিত
’৯৮ বিশ্বকাপেই দল বাড়িয়ে করা হয় ৩২। ২০২২ পর্যন্ত এই নিয়মেই চলবে বিশ্বকাপ। ২০২৬ বিশ্বকাপ হবে ৪৮ দলের। গোল্ডেন গোল নিয়মটি চালু হয় সেই বিশ্বকাপেই। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের লরাঁ ব্লা’র ১১৩ মিনিটের গোলটিই ছিল বিশ্বকাপের প্রথম গোল্ডেন গোল। ফ্রান্সের ওই আসর টিভিতে একযোগে দেখেছেন ৩৭ কোটি দর্শক।

ফাইনাল
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপকে রাঙিয়ে দিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় ফ্রান্স। যদিও বেশ টেনেটুনেই পথটা পেড়োতে হয়েছে তাদের। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে গোল্ডেন গোল নামক ঝলকের পর কোয়ার্টার ফাইনালেও ভাগ্যের ছোঁয়া। টাইব্রেকে বাজ্জিওর ইতালিকে ৩-৪ ব্যবধানে হারিয়ে, পরে সেমিতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় তুলে ফাইনালে যায় স্বাগতিকরা। যেখানে প্রতিপক্ষ হটফেভারিট ব্রাজিল!

২০ বছর পর সেই ফাইনাল নিয়ে মুখ খোলেন সাবেক উয়েফা সভাপতি ও ফ্রান্স কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি। বলেছেন, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্স এবং ব্রাজিলকে ফাইনালে তুলতে তিনি ‘ছোট একটি চালাকি’ করেছিলেন। ড্রয়ের সময় ইচ্ছা করে ফ্রান্স, ব্রাজিলের নাম আলাদা-আলাদা পাত্রে রেখেছিলেন। যাতে তারা একই গ্রুপে না পড়ে! যদিও ফিফার দিক থেকে চালাকি ছিল না বলে জানানো হয়েছে। চালাকি ছিল নাকি ছিল না সেটা সরিয়ে রেখেই বলা যায়, গ্রুপিং বেশ কাজে লেগেছিল ফ্রান্সের। নক আউটে পরাশক্তি ব্রাজিলকে এড়াতে পেরেছিল তারা।

অন্যদিকে গ্রুপপর্বের তৃতীয় ম্যাচে হারের ধাক্কা সামলে ভালোমতই ফাইনালে পৌঁছে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয় রাউন্ডে চিলির বিপক্ষে ৪-১, কোয়ার্টারে ডেনমার্ককে ৩-২ ও সেমিতে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকে ৪-২ (১-১) ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের যায় টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্নে বিভোর ব্রাজিল।

রোনাল্ডো জ্বললেন না, বিশ্বকাপও হাতছাড়া ব্রাজিলের

১২ জুলাই স্টাডে ডি ফ্রান্সে হবে ১৬তম বিশ্বকাপের ফাইনাল। সবাই যখন উদগ্রীব, ম্যাচ শুরুর ৪৫ মিনিট আগে জানা গেল খেলছেন না ব্রাজিলের অন্যতম ভরসা রোনাল্ডো। সেসময় একেক দিক থেকে শোনা যেতে লাগল একেক খবর। কেউ বলছেন রোনাল্ডো পড়েছেন চোটে, কারও মত- জটিল রোগে পড়েছেন ৬ ম্যাচে ৪ গোল করা ফরোয়ার্ড। আবার একদল বলছে হোটেল রুমেই নেই রোনালদো।

কী হয়েছিল ১২ জুলাইয়ের ফাইনালে? ২০০২ সালের বিশ্বকাপের আগে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকা। সেই তদন্তে উঠে আসে, ফাইনালের দিন দুপুরে একটি রেস্তোরায় খেতে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা। সেখান থেকে ফেরার পর হঠাতই অজ্ঞান হয়ে পড়েন রোনাল্ডো। তার রুমমেট রবার্তো কার্লোস ঘাবড়ে গিয়ে খবর দেন চিকিৎসক, টিম ম্যানেজারকে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয় ফাইনালে খেলানো হবে না রোনাল্ডোকে।

ঠিক কী কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেই বিষয়টি যদিও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে শেষপর্যন্ত ফাইনালটা খেলেছিলেন রোনাল্ডো। মাঠে নেমে যদিও হয়ে রইলেন নিজের ছায়া। যার পায়ের জাদুতে ফাইনালে ব্রাজিল, সে-ই যদি থাকেন ম্রিয়মাণ তাহলে দলের অবস্থা বোঝা যায় সহজেই। জিনেদিন জিদান জাদুতে প্রথমার্ধেই দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। পরে ম্যাচে আর ফেরার সুযোগই হয়নি সেলেসাওদের। জিদানের জোড়া গোলের সঙ্গে পেটিটের অতিরিক্ত সময়ের গোলে ব্রাজিলকে ৩-০তে হারিয়ে প্রথমবারের মত নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে ফরাসিরা।

একনজরে ’৯৮ বিশ্বকাপ
প্রথমবারের মতো অংশ নেয় ৩২ দল। ওই বিশ্বকাপে খেলা হয়নি রাশিয়ার। ৬৪ ম্যাচে ২.৬৭ গড়ে গোল হয়েছে ১৭১টি। সবচেয়ে বেশি গোল স্বাগতিক ফ্রান্সের, ১৫টি। প্রথমবারের মতো সাউথ আমেরিকান দলগুলি আলাদা আলাদা গ্রুপে না খেলে খেলেছে এক গ্রুপে। বিশ্বকাপে চমক ছিল ক্রোয়েশিয়া। প্রথমবারের মতো খেলতে এসেই তৃতীয় স্থান অর্জন করে দলটি।

সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়
আসরে ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেন ক্রোয়েশিয়ার ডেভর শুকের। আর ফাইনালে জাদু দেখাতে না পারলেও পুরো আসরে বিশ্বকে বুদ করে রাখায় গোল্ডেন বল বা সেরা খেলোয়াড় হন রোনাল্ডো।