সবধরনের ক্রিকেট থেকে সাকিব আল হাসানকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি অধিনায়কের এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানায় বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
যার মধ্যে এক বছর হল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের পর আইসিসির কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে এবং সন্তোষজনক হলে এক বছর পরই উঠে যাবে নিষেধাজ্ঞা।
৩২ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারের বিপক্ষে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পরও তা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে (আকসুর) না জানানোর অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। আইসিসির দুর্নীতি-বিরোধী নিয়ম ভঙ্গের তিনটি অভিযোগ সাকিব স্বীকার করে নেয়ার পর সিদ্ধান্তের কথা জানায় আইসিসি। যেজন্য সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।
এক বছর পর নিষেধাজ্ঞা যদি ওঠেও, তবুও আগামী টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না সাকিবের। এক বছরের পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর। আর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু একই বছরের ১৮ অক্টোবর।
আইসিসি বলছে, আগামী এক বছর সাকিব খেলতে পারবেন না, কিন্তু তিনি যদি সাজার সব শর্ত মেনে চলেন তাহলে ২০২০ সালের ২৯শে অক্টোবর থেকে মাঠে ফিরে আসতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আইনের ১ অনুচ্ছেদের ২.৪.৪ অনুযায়ী দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার জন্য তিনি যে পন্থা বা আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, তার পুরো বিবরণ আকসুর (আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট) কাছে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ঘটনা ২০১৮-এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়েকে নিয়ে হওয়া ট্রাই-সিরিজ ও একই বছরের আইপিএল সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একটি ম্যাচে সাকিব ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান। আইপিএলের ম্যাচটি ২০১৮ সালের ২৬শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়।
আরও বলা হয়েছে, আইসিসির বিধান অনুসারে, সাকিব আল হাসান এই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন এবং দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনালের শুনানির পরিবর্তে আইসিসির কাছে এই অনুমোদনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। যেখানে, এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের পর আইসিসির কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে এবং সেটা সন্তোষজনক হলে এক বছর পরই উঠে যাবে নিষেধাজ্ঞা। তিনি তখন ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পুনরায় শুরু করতে পারবেন।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর আইসিসিকে সাকিব বলেছেন, ‘আমি যে খেলাটিকে পছন্দ করি তা থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় আমি স্পষ্টতই অত্যন্ত দুঃখিত। তবে পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতিবেদন না দেয়ার জন্য আমি আমার দোষ পুরোপুরি মেনে নিয়েছি। আইসিসি, আকসু দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য খেলোয়াড়দের উপর নির্ভরশীল এবং আমি এই উদাহরণে আমার দায়িত্ব পালন করিনি।’
‘বিশ্বের বেশিরভাগ খেলোয়াড় এবং অনুরাগীর মতো আমিও চাই ক্রিকেট একটি দুর্নীতিমুক্ত খেলা হোক এবং আমি আইসিসি, আকসু দলের সাথে কাজ করার প্রত্যাশায় রয়েছি, যাতে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা সমর্থন করে এবং তরুণ খেলোয়াড়রা যাতে একই ভুল না করে, যেটা আমি করেছিলাম।’ যোগ করেন সাকিব।
আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্স মার্শার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসান একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তিনি অনেকগুলো শিক্ষামূলক অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন এবং আইসিসির কোডের আওতায় তিনি বাধ্যবাধকতাগুলো জানেন। এই পদ্ধতির প্রতিটি বিষয় তার জানা উচিত ছিল।’
‘সাকিব তার ত্রুটিগুলো মেনে নিয়েছেন এবং তদন্তে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছেন। তিনি ভবিষ্যতের শিক্ষায় স্বচ্ছতা ইউনিটগুলোকে সহায়তা করার, তরুণ খেলোয়াড়দের তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি এই প্রস্তাব গ্রহণ করে খুশি।’
বাংলাদেশের জার্সিতে ৫৬ টেস্ট, ২০৬ ওয়ানডে ও ৭৬টি টি-টুয়েন্টি খেলেছেন সাকিব। সাদা পোশাকে পাঁচ সেঞ্চুরিতে প্রায় ৪০ গড়ে ৩৮৬২ রান করেছেন তিনি, সেরা ২১৭। আছে ২১০ উইকেট।
ওয়ানডেতে ৯ সেঞ্চুরিতে প্রায় ৩৮ গড়ে ৬ হাজারের উপর রান ও ২৬০ উইকেট সাকিবের নামের পাশে। টি-টুয়েন্টিতে সেখানে দেড় হাজার রানের সঙ্গে এ বাঁহাতি স্পিনারের সংগ্রহ ৯২ উইকেট।