নাগরিক সভ্যতা থেকে বহুদূরে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপ মিডওয়ে অ্যাটল। কোলাহলমুক্ত সৈকতে বসলে এক অন্যরকম প্রশান্তি ভর করে মনে। তবে চোখে নামিয়ে সৈকতের বালুর দিকে তাকালেই দেখা যাবে মানবসভ্যতার বিধ্বংসী রূপ।
মোটরসাইকেলের হেলমেট, পুতুলের মাথা, ছাতার ভাঙা হাতল থেকে শুরু করে পুরো সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরণের অজস্র প্লাস্টিক বর্জ্য।
শিল্পোন্নত দেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিকের এসব আবর্জনা বিপন্ন করছে ছোট্ট দ্বীপটির প্রাণ-পরিবেশ ।
বিভিন্ন সমীক্ষাতে সাগরে প্লাস্টিক নামের বিভীষিকার ভয়াবহতা স্পষ্ট । এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী এখনই সাগরগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন। প্রতিবছর সাগরে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে ৮০ লাখ টনেরও বেশি প্লাস্টিক। এতো প্লাস্টিক জমা হচ্ছে যে ২০৫০ সাল নাগাদ সাগরে মোট মাছের ওজনকে ছাড়িয়ে যাবে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ওজন।
মানুষের ছুড়ে ফেলা এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে জন্য হুমকির মুখে পড়ছে সাগর পাড়ের উদ্ভিদ-প্রাণী জীবন। মিডওয়ে অ্যাটলের চিত্রই ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে। এক সময় পাখিদের অভয়ারণ্যের বাতাস এখন পচতে থাকা পাখিদের দেহের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে। একসময় ডানা ছড়িয়ে আকাশে উড়ে বেড়ানো অ্যালবাট্রসগুলো প্লাস্টিক গিলে গিলে মুখ থুবড়ে পড়ছে বালিতে। পচতে থাকা পাখিগুলোর পেটের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে বোতলের ছিপি, সিগারেট লাইটার কিংবা টুকরো টুকরো আরও কত শত প্লাস্টিক কণা।
একসময়ের প্রাণবন্ত দ্বীপটিতে এখন পাখি মরছে, পচছে কিন্তু ওদের পেটের ভেতরের প্লাস্টিকগুলো থেকে যাচ্ছে অবিকল।
শুধু পাখিই নয় মাছ, সিল এসব জলের প্রাণীরাও আছে হারিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তবে প্লাস্টিক ক্ষতের আগেই হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের চাপে সাগরের উচ্চতা বেড়ে হারিয়ে যাবে মিডওয়ে অ্যাটল।