প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের জাতীয় জীবনে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চলতি জেএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন টাকার বিনিময়ে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ফাঁস করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুলের সামনে পরীক্ষা শুরুর আগেও শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে প্রশ্ন খুঁজতে দেখা যায়। এই স্কুলগুলো আবার রাজধানীর নামীদামি স্কুল। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছে তাদের অভিভাবকরা। কিছুসংখ্যক অভিভাবক এই বিষয়ে নিজেদের ক্ষোভ জানালেও অনেক অভিভাবক সরাসরি নিজের সন্তানদের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন জোগাড় করে দিচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। চ্যানেল আই অনলাইনেও এ বিষয়ে মতামত প্রকাশ হয়েছে। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিত্র ফুটে উঠেছে। স্কুলের সামনে থাকা শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাসের আড়ালে নিয়ে খোদ শিক্ষকরা মোবাইলে প্রশ্নপত্র দিয়ে তা সমাধান করে দেওয়ার খবর তাতে উঠে আসে। বিষয়গুলো আমাদের জাতীয় জীবনে নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত রূপ বলেই আমরা মনে করি। শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি থেকে শুরু করে অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সবার মধ্যে এই অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জ্ঞানার্জন কিংবা শিশুদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার প্রকৃত শিক্ষার বদলে যেকোন ভাবে পরীক্ষায় পাশ করানোর প্রবণতার কারণেই এমনটা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। প্রশ্নফাঁস রোধে সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে জানানো হলেও তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাহলে কি এ বিষয়ে দায় শুধুই শিক্ষামন্ত্রীর? সংশ্লিষ্ট বোর্ডের প্রধান কিংবা অন্য কর্মকর্তাদের কোন দায় নেই? আমরা মনে করি, এসব বিষয়ের দায় শুধু শিক্ষামন্ত্রীর উপর না চাপিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা ব্যতীত কোনভাবেই এ বিষফোঁড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই বলে আমরা মনে করি।