চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সু চিকে ট্রুডো বললেন, রোহিঙ্গা নির্যাতন কেন বন্ধ হচ্ছে না

জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নিতে শুক্রবার মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে ৪৫ মিনিটের বৈঠক করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিতব্য অ্যাপেক সম্মেলনের আগে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারে ট্রুডোর বিশেষ দূত বব রে। যিনি নিজেও এর আগে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখে গেছেন এবং ট্রুডোকে সেসব বিষয়ে অবহিত করেছেন।

কানাডার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৈঠকে সু চির কাছে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। এছাড়া এ বিষয়ে সু চির ভূমিকা এবং সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলেছেন তারা।

রাখাইনে সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া মানবিক সংকটের সম্ভাব্য সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে ৪৫ মিনিটের এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

ট্রুডোর বিশেষ দূত বব রে জানান: রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নিপীড়ন বন্ধ এবং তারা নিজ দেশ থেকে যেসব কারণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো দ্বিধাহীনভাবে সু চির সঙ্গে কথা বলেছেন।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার

তিনি বলেন: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সরাসরি এসব কথা শোনা সু চির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি আরও মনে করি যে, এ বিষয়ে তার (সু চির) বক্তব্য শুনতে পাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

বব রে আরও বলেন: সু চি মনে করছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আমি মনে করি এটা বলা সমীচীন যে, এই চেষ্টা আরও করতে হবে এবং আরও করা যেত।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সভায় প্রস্তাব উঠানো হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন: শুধু কানাডাই এমনটা অনুভব করছে তা নয়, এসব প্রশ্ন উত্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা সংখ্যালঘু নই।

নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নিপীড়নকে ‘টেক্সট বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার মতো গণহত্যার দৃষ্টান্ত’ বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু মিয়ানমার সরকার সংকটের সমাধান না করে নানাভাবে রোহিঙ্গাদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কার্যত নীরব থাকায় সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে নোবেল বিজয়ী সু চির সমালোচনা হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে সু চির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখনও তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন ট্রুডো। সেসময় তিনি রাখাইনে বিশেষ দৃষ্টি দিতে সু চিকে অনুরোধ করেছিলেন।

ফোনে কথা বলার পর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। ওই চিঠিতে তিনি বলেন: অবিলম্বে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সন্ত্রাস বন্ধ করে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনুন।

চিঠিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আক্রান্ত রাখাইন রাজ্যে অবাধে প্রবেশের অধিকার দেয়ার দাবি জানিয়ে ট্রুডো লিখেছেন: বহির্বিশ্বে আপনি যে সম্মান পেয়েছেন, আপনাকে উদ্দেশ্য করে যে সব প্রশংসাবাণী এ যাবতকাল  উচ্চারিত হয়েছে, সেগুলোকে অর্থবহ রাখতে আপনাকে অবশ্যই মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

গত মাসে ট্রুডোর ঘোষণা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নিপীড়ন ও মানবিক সংকট সমাধানে কানাডার করণীয় ঠিক করতে তার প্রতিনিধি হিসেবে বব রে মিয়ানমার ঘুরে দেখেন এবং রিপোর্ট পেশ করেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।