‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইতে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপানোর ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চে স্বশরীরে হাজির হয়ে তিনি এই ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এই বেঞ্চ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইতে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপিয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি ছাপানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে ১২ মার্চ স্বশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে বইটির পুরনো যত কপি আছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে এবং বইটি যেন বাজারে না ছাড়া হয় সে নির্দেশ দেন আদালত। সে আদেশের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার হাইকোর্টে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন শুভঙ্কর সাহা।
এসময় আদালত শুভঙ্কর সাহাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে রিলেটেড এমন বঙ্গবন্ধুর ছবি তো ছিল। কিন্তু ওই বইতে দেওয়ার মতো বঙ্গবন্ধুর একটা ছবিও আপনারা পেলেন না?’
এরপর শুভঙ্কর সাহা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বলেন, নতুন করে ছাপানো ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইতে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেওয়া হয়েছে।
এসময় আদালত বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি না দিয়ে ছাপানো আগের বইগুলোর কী অবস্থা? সেগুলো কী করা হয়েছে? এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এফিডেফিট আকারে আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়ে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামি ৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো: আজিজ উল্লাহ ইমন এবং শুভঙ্কর সাহার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যোবায়ের রহমান।
আইনজীবী মো: আজিজ উল্লাহ ইমন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টারনাল নোটিশ দিয়ে প্রথম প্রকাশিত বইটি বাতিল করেছে। আর নতুন প্রকাশিত বইতে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।’
এর আগে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বই নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এফবিসিসিআই পরিচালক কাজী এরতেজা হাসান একটি রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই বইটিতে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে কিনা তার তদন্তের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এবং তদন্ত করে এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত অনুসন্ধান কমিটি। সে প্রতিবেদনে ইতিহাস বিকৃতির দায়ে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটি প্রকাশনার সাথে সম্পৃক্ত ছয় কর্মকর্তাকে দায়ী করে বলা হয়, ‘বইটি প্রকাশের জন্য গঠিত গবেষণা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটির কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল।’ অনুসন্ধান কমিটির দেওয়া এই প্রতিবেদনের উপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট শুভঙ্কর সাহাকে হাইকোর্টে তলব করেন।