চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নতুন কর নয়, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বন্ধের পরামর্শ সিপিডি’র

আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে কর আরোপ না করে বরং কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলেছে, নীতি পরিকল্পনায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির চিন্তা থেকে বেরিয়ে বৈষম্য দূর করা ও সুষম বণ্টনের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।

সোমবার ‘জাতীয় অর্থনীতির পর‌্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সিপিডির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

এতে তিনি বলেন, বর্তমান কর কাঠামোতে নতুন কর আরোপ করা বা উচ্চ কর আরোপের সুযোগ নেই। যাওয়াও ঠিক হবে না। তবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। এজন্য কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থপাচার রোধ করতে হবে।

রাজস্বের বিষয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, প্রতি বছরের মত চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব সংগ্রহে যতটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, সেই তুলনায় সরকারের ব্যয় হচ্ছে না। এছাড়া শিল্প খাতের উৎপাদন কমেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগও কমেছে। তবে রপ্তানিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু করোনার আগের অবস্থায় যায়নি। করোনার কারণে মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে যারা চাকরি ফিরে পেয়েছেন তাদের আয় আগের অবস্থানে যায়নি। ফলে ভোগ কমে গেছে। দারিদ্র ও বৈষম্য বেড়েছে। মানুষ তার যোগ্যতার তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বৈষম্য রোধ ও সমবণ্টনে মনোযোগ দিতে হবে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের চিত্রকে হতাশাজনক উল্লেখ করে প্রবন্ধে বলা হয়, গত ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম। ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ শতাংশ। আর স্বাস্থ্য খাতের এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ৩১ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যক্তি খাতে ঋণ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যেখানে ১৫ শতাংশ, প্রথম ৮ মাসে তা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার, বিশেষ করে চলমান গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে অর্থ ব্যয় করেও প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন হবে না।

বড় বাজেট করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে সিপিডি বলেছে, জিডিপির তুলনায় ঋণ এখনো ৩২ থেকে ৩৩ শতাংশের ঘরে রয়েছে। এখনো ঋণ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। কৃষি খাতে মূল্য কমিশন ও ব্যাংক কমিশন করার সুপারিশ করে সিপিডি বলেছে, মূল্য কমিশন থাকলে কৃষকেরা সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন, ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এ কমিশন থাকলে কোন সময়ে কী নিত্যপণ্য আমদানি করতে হবে, তার পরামর্শ পাওয়া যেত। এছাড়া ব্যাংক কমিশন করার জন্য সরকার একবার উদ্যোগ নিয়েও আবার পিছিয়ে গেছে। এটা দরকার। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণের যা দেখা যাচ্ছে, তা যে কোনো স্বচ্ছ ছবি নয়, এমনটা বলা যায়।

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে, প্রণোদনা বাস্তবায়নে বহু পাক্ষিক টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

এছাড়া সিপিডির পরামর্শ, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আগামী বাজেটটি করতে হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্ব না দিয়ে জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ রাখার কথা সরকার বলছে। কিন্তু এর মধ্যে পেনশনসহ আরও অনেক বিষয় রয়েছে, সেগুলো সরাসরি দরিদ্র মানুষের সাথে সম্পর্কিত নয়। এসব বাদ দিলে প্রকৃত সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ দাঁড়ায় জিডিপির দেড় শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গড়ে ৪ শতাংশ। ফলে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত।

স্বাস্থ্যখাত বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ নেই। আগে এগুলো বন্ধ করতে হবে। মধ্য মেয়াদে সংস্কার কর্মসূচি নিতে হবে। নতুবা বরাদ্দ করা অর্থের অপচয় হবে। সামাজিক সুরক্ষা গ্রামকেন্দ্রিক। এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মধ্য মেয়াদি সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জায়গা ছিল, বাজেট বাড়ানোর সঙ্গে সেখানে সমানভাবে হাত দেয়া হয়নি। সরকারি ব্যয় (রাজস্ব ও উন্নয়ন) জিডিপির ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। পাকিস্তান, ভারত, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম। বাস্তবায়ন সক্ষমতা অর্জনের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না। করোনার মত সংকট যখন আসে, তখন প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। প্রয়োজনীয় ব্যয় করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। দরিদ্রদের (শহর ও শহরতলীসহ) হালনাগাদ তালিকা জরুরি।