আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে আসামীর সঙ্গে দেখা করাসহ উত্থাপিত আরও দুইটি অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তদন্ত কমিশনের সদস্য হচ্ছেন, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি নিজামুল হক। শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত কয়েকদিন ধরে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সম্পর্কে এমন কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যা ট্রাইব্যুনালের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যেহেতু একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং গত পাঁচ বছর ধরে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মামলা সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছেন, সে কারণে অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য নির্মূল কমিটি সুপ্রীম কোর্টের ৩ জন প্রাক্তন বিচারককে নিয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।
শনিবার সকালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথসভায় ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কথিত অভিযোগ তদন্তের জন্য গঠিত কমিশন তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।
এতে বলা হয়- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারের দুই মেয়াদের অন্যতম প্রধান সাফল্য হচ্ছে দেশে ও বিদেশে যাবতীয় প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র বানচাল করে একাত্তরের গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, যা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও প্রশংসা অর্জন করেছে। এই বিচার কার্যক্রমের মান, ট্রাইব্যুনালের মর্যাদা এবং বিচার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন ও দ্রুততর সম্পন্ন করার প্রয়োজনে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- যেহেতু ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কথিত অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর ও স্পর্শকাতর, সেহেতু দ্রুত সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করা হোক। একই সঙ্গে আমরা অভিযুক্ত, অভিযোগকারী এবং ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অনুরোধ করব এ বিষয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তারা যেন প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য প্রদান না করেন। কোনোরকম তদন্ত ছাড়া একটি মহলের অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের অন্যতম দক্ষ প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সম্পর্কে যে সব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা ৩০ লক্ষ শহীদ পরিবারের পাশাপাশি বিচার প্রত্যাশী গোটা জাতিকে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে, যা ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকারক। আমরা গণমাধ্যমকেও অনুরোধ জানাচ্ছি- একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গুরুত্ব, স্পর্শকাতরতা এবং দেশে-বিদেশে এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করবার চলমান চক্রান্ত বিবেচনা করে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে আর কোনও সংবাদ যেন প্রকাশ বা প্রচার করা না হয়।’
নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি নিজামুল হক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, ডাঃ ইকবাল কবীর, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, জনাব কাজী মুকুল, শহীদজায়া সালমা হক, কবি ড. ফরিদা মজিদ, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মকবুল-ই ইলাহী চৌধুরী, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, লেখক আলী আকবর টাবী, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, অধ্যাপক আবদুল গফ্ফার, সমাজকর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন লাভলু, সাংবাদিক ফজলুর রহমান, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, শহীদসন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা, ডাঃ মামুন আল মাহতাব, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় প্রমূখ।