আ ক ম মোজাম্মেল হক ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর গাজীপুর সদর উপজেলার দাখিণ খান গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম ডাঃ আনোয়ার আলী ও মায়ের নাম মরহুমা রাবেয়া খাতুন। আ ক ম মোজাম্মেল হক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি ১ মেয়াদে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও দুই মেয়াদে সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গাজীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি গাজীপুর জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের বিরুদ্ধে সম্মুখে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
স্থানীয় সরকার পরিচালনায় তিনি বিশেষ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ৩ বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। ১৯৮৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪ বার পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন। বহুবার তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ১৯৯৬ ও ২০০৩ সালে শ্রেষ্ঠ পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ঢাকা সদর উত্তর মহকুমার কার্যালয় এসডিও অফিস গাজীপুরে স্থানান্তরিত করা ও পরবর্তীতে গাজীপুর জেলা বাস্তবায়নে মূলত একক দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীপুর ১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী হেসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আ ক ম মোজাম্মেল হক শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক অসংখ্য কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন। তিনি সরকারি সফরে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন।
প্রশ্ন: অনেকেই নতুন মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পাননি কিন্তু আপনি রয়েই গেলেন। মানদণ্ড কি?
আ ক ম মোজাম্মেল হক: মানদণ্ড একমাত্র প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন, তিনি কোন মানদণ্ডে বিচার করেছেন? তবে এই রদবদল হওয়াটা কিন্তু রেওয়াজ। মানুষ যখন একটা ম্যান্ডেড দেয় তখন যিনি সরকার প্রধান থাকেন তার দায়িত্ব থাকে সেই জনগণের ম্যান্ডেড বাস্তবায়ন করা। প্রতিটি নির্বাচনের পরে সব দেশেই অদল বদল হয়। তবে এই বছর একটু ব্যাপক আকারে হয়েছে। তাই এটি সবার দৃষ্টিতে লেগেছে। যারা চলে গেছেন তারাও কিন্তু দেশের জন্য অবদান রেখে গেছেন। তারাও বিগত দিনে মন্ত্রী হিসেবে মানুষের সেবা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে দেশের জন্য কাজ করেছেন। যাওয়া আসা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই এই প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রশ্ন: সামনের দিনগুলোতে আপনি কি করতে চান?
আ ক ম মোজাম্মেল হক: এবারে আমাদের যে জয় হয়েছে তার পেছনে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করা। তাই মুক্তিযুদ্ধকে আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। আমি মনে করি এখন ব্যাপক কর্মসূচি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রথমত চিন্তা করছি- শিশু শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যার যার উপযোগী করে পাঠ্যসূচি রচনা করবো। সেখানে থাকবে পাকিস্তানের ২৪ বছরের নির্যাতন, তাদের শোষণ ও অবিচারের তথ্য। আমাদের কেন মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছিল? কেন তা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল সকলের জন্য? কিভাবে আমরা ৯ মাস যুদ্ধ করেছি? সকল অত্যাচারের কাহিনী সম্বলিত সঠিক ইতিহাস থাকবে। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মিথ্যা সব ইতিহাস শেখানো হয়েছে। আমাদের সন্তানেরা প্রায় ৩০ বছর মিথ্যা ইতিহাস জেনেছে এবং বিভ্রান্ত হয়েছে। সেই জন্য আমরা সেই বলয় থেকে বের হয়ে সত্যিকারের ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত করতে- যা যা করণীয় তা করবো। শিশু অবস্থা থেকেই যে কেউ মুক্তিযুদ্ধের আবহ সকল কাজে দেখতে পায় তার ব্যবস্থা করবো।
প্রশ্ন: তাহলে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলেও জামায়াতের রাজনীতি কেন নিষিদ্ধ করছে না সরকার?
আ ক ম মোজাম্মেল হক: এখনো উচ্চ আদালতে আপিল চলছে। আদালতে আপিল থাকায় এই মুহূর্তে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা আশাবাদী মহামান্য আদালত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রায় দেবেন। দুনিয়ার কোন দেশেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাজনীতি করতে পারে না।
প্রশ্ন: আগামী ৫ বছরে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে কোন চিন্তা ভাবনা আছে কি?
আ ক ম মোজাম্মেল হক: অবশ্যই। মানুষ আমাদের এবারের নির্বাচনে এই জন্য সাংঘাতিকভাবে ম্যান্ডেড দিয়েছে। দেখুন, জামায়াতের কানেকশনের কারণে এবারের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছে। এখনকার নতুন প্রজন্ম এবং পুরো জাতি অনেকটা সময় মিথ্যাচারের ভেতরে ছিল, আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী? মসজিদে আজান হবে না উলু ধ্বনি হবে? সেই ইসলামী সম্প্রদায় এখন দেখেছে যে, আওয়ামী লীগই প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বন্ধু। শেখ হাসিনাকে তারা কওমী জননী হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কাছেই যে ইসলাম নিরাপদ তা এখন সর্ববিদিত প্রমাণিত সত্য। আরেকটা মিথ্যা প্রচারণা ছিল যে, নৌকায় ভোট দিলে দেশ ভারত হয়ে যাবে। উল্টো মানুষ দেখেছে- ভারতের কাছ থেকে আমরা সমুদ্রসীমা উদ্ধার করেছি। ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছে আওয়ামী লীগ। আমরা কারো স্বার্থ সংরক্ষণ করি না। একমাত্র বাঙালি জাতির স্বার্থ সংরক্ষণ করি আমরা। অন্য দেশের স্বার্থ আমরা সংরক্ষণ করি না। বন্ধুত্ব, পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সম্মানের জায়গা রক্ষা করি আমরা।
প্রশ্ন: তরুণদের জন্য কি করতে চান?
আ ক ম মোজাম্মেল হক: তরুণরা যাতে হতাশ না হয়ে যায়, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সুযোগ সুবিধা যাতে পায়- তাই তাদের কাজের ক্ষেত্র বিস্তারে কাজ করবো। তাদের শুধু কাজ দিয়ে না মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মোটিভেটেড করবো। আমরা শুধুমাত্র পতাকার জন্য যুদ্ধ করিনি। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়েছেন আর্থিক মুক্তির জন্য। তরুণদেরকে সেই আর্থিক মুক্তির স্বাদ দিতে আমরা কাজ করছি।