চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

স্বর্ণালী সতেরোয় চ্যানেল আই

ষোলো বছর পূর্ণ করে আজ ১ অক্টোবর ২০১৫-তে চ্যানেল আই সতেরোয় পা দিচ্ছে। সতেরো মানে এক স্বর্ণালী সময়। স্বর্ণালী সময় মানে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, সবকিছু জয় করার এক অদম্য স্পৃহা। ষোল বছর একটি গণমাধ্যমের জন্য খুব দীর্ঘ সময় না হলেও দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করে গত ষোলো বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে চ্যানেল আই। সংবাদ ও সংস্কৃতির সকল শাখায়, জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতিতে, অর্থনীতিতে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, পরিবেশ-প্রকৃতিতে চ্যানেল আই-এর উদ্ভাবনী পথচলা অব্যাহত আছে। এভাবে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজ অর্থনীতি ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সব মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেছে চ্যানেল আই। চ্যানেল আই মানে হৃদয়ে গভীরভাবে বাংলাদেশকে ধারণ করা একটি গণমাধ্যম। চ্যানেল আই বিশ্বাস করে ‘লাল সবুজ আমাদের শক্তি’।

এদেশে আধুনিক বাংলা টিভি নাটক নির্মাণে পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান বলা যায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আইকে। একসময় যখন বাংলা নাটকই দেশের মানুষের নির্মল বিনোদনের একমাত্র উপকরণ ছিল ঠিক সেই সময়টিতে ইমপ্রেস একের পর এক নির্মাণ করেছে অনেক দর্শকপ্রিয় নাটক। শুরু থেকে চ্যানেল আই দেশের শিল্প সংস্কৃতির গুণী মানুষদের যুক্ত করেছে তার পথযাত্রায়। তাছাড়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও চ্যানেল আই ছড়িয়ে পড়েছে তার নানা অনুষ্ঠান নিয়ে। এভাবে পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশের বাংলাভাষীরা যুক্ত হয়েছেন চ্যানেল আই-এর লাল সবুজ রঙের সঙ্গে। যুক্ত হয়েছেন হৃদয়ে বাংলাদেশ চেতনায়। লাক্স-চ্যানেল আই পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ধারণ করা হয়েছে দেশের বাইরে।

আজ দেশের সংগীত প্রতিভার কথা উঠলেই আসে সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের কথা, আসে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠের কথা; শিশু-শিল্পীর গান মানেই চ্যানেল আই-এর মেরিডিয়ান ক্ষুদে গানরাজ অনুষ্ঠান; অভিনয় প্রতিভা আর নতুন মুখ অনুসন্ধান মানেই লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টারসহ চ্যানেল আই-এর বিভিন্ন ইভেন্ট।

একবিংশ শতাব্দী তথ্য প্রযুক্তির শতাব্দী। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী আজ বিশ্বপল্লীতে রূপান্তরিত। আজকের বিশ্বপল্লীতে টেলিভিশন মানে তাৎক্ষণিক আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগ, টেলিভিশন মানে বিশ্বকল্যাণ, টেলিভিশন মানে মানব সেবা, টেলিভিশন মানে জাতির উন্নয়ন ও ক্রমবিকাশেরও অনন্য বাহন। আজকের সমাজকে তথ্যসমাজ বলে অভিহিত করা হয়। তথ্যের দ্রুত সম্প্রচার ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সর্বদা তথ্যায়িত রাখার দায়িত্ব পালন করছে এই চ্যানেল। টেলিভিশন আজ শিক্ষার মাধ্যম, তথ্য মাধ্যম, বিনোদন মাধ্যম, সংস্কৃতির মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম।

চ্যানেল আই এদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু সংখ্যক গুণী শিল্পীকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতাদানও অব্যাহত রেখেছে। জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলও যে হয়ে উঠতে পারে সমাজের অনেক ভালো ও শুভ ঘটনার নেপথ্য শক্তি, চ্যানেল আই তার উত্তম দৃষ্টান্ত। টেলিভিশন মানুষকে যে আরো সক্রিয় করতে পারে দেশের কাজে সেই বিশ্বাস থেকে চ্যানেল আই নিয়মিত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করেছে নতুন কিছু কর্মসূচি যা এক ধরনের সামাজিক আন্দোলন।

নতুন উদ্যোগ
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ২০১৫ সালের শোকাবহ আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীতে চ্যানেল আই আয়োজন করে মাসব্যাপী অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পাঠ। চ্যানেল আই-এর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। মাসব্যাপী এই আয়োজন নতুন প্রজন্মের মাঝে বইটি পাঠের প্রচুর আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে ষোল কোটি মানুষের তথ্যসংযোগ সক্রিয় রাখার এটি একটি প্রশংসনীয় সম্প্রচার পরিকল্পনা।

সংবাদের বিশেষত্ব
এবার পনেরো বছরে পদার্পণ করছে চ্যানেল আই সংবাদ। শুরু থেকেই চ্যানেল আই সংবাদ কৃষি ও গ্রামীণ জনপদকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে আসছে। চ্যানেল আই বাংলাদেশে প্রথম ‘জনপদের খবর’ চালু করে। এরই ধারাবাহিকতায় চ্যানেল আই প্রতিদিনের জাতীয় সংবাদের সঙ্গে যুক্ত করে ‘কৃষি সংবাদ’। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বিশেষায়িত পূর্ণাঙ্গ ‘কৃষি সংবাদ’ প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে চ্যানেল আই বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কৃষি সাংবাদিকতা ও কৃষি সম্প্রচারের অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চ্যানেল আই।

চ্যানেল আই-ই দেশে প্রথম প্রতিদিনের সংবাদপত্রের খবর নিয়ে ‘সংবাদপত্রে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। দেশ-বিদেশের সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদ ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার (সজীব সম্প্রচার) করে চ্যানেল আই সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বিশেষ দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দিনগুলোতে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচার চ্যানেল আই-এর সমাজ সচেতনতারই প্রতিফলন।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম
চ্যানেল আই-এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড। আমরা জেনেছি, এর প্রযোজনায় এ-যাবৎ মুক্তিপ্রাপ্ত মোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৮৭। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের মালিকানা-স্বত্বের আওতায় রয়েছে মোট ১২৫টির মতো চলচ্চিত্র। সুস্থধারার ও বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও দর্শকপ্রিয়তায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম শুধু বাংলাদেশের দর্শকদেরই মন জয় করেনি, বিশ্ব চলচ্চিত্রেও অর্জন করেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ২০০৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নয় বছরে তাদের ৮টি চলচ্চিত্র অস্কার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। অত্যন্ত গৌরবের কথা, এ পর্যন্ত ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর চলচ্চিত্র ৪৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছে ১৪০টি। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র মনের মানুষ ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছে।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত হূমায়ুন আহমেদ পরিচালিত ঘেটুপুত্র কমলা ৩য় নেপাল হিউম্যান রাইটস্ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া মুম্বাই ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করেছে জোনাকির আলো। এই চলচ্চিত্রটি যুক্তরাষ্ট্র ও রুমানিয়ায়ও পুরস্কার লাভ করেছে।

হৃদয়ে মাটি ও মানুষ
শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় প্রচারিত নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছে নানামুখী ভূমিকা। চ্যানেল আই-এর দর্শকপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে শাইখ সিরাজের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় প্রতি বছরের ঈদ আয়োজন ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’। কৃষকসমাজ নিয়ে এ ধরণের আয়োজন যে কত প্রয়োজন সেটি আমরা উপলব্ধি করি।

এছাড়া ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে নগরের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার অভিপ্রায়ে কৃষি উৎপাদন ও বাণিজ্যিক শিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে ‘ফিরে চল মাটির টানে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। শহর বিশেষ করে রাজধানীতে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের সরাসরি গ্রামের কৃষিমাঠে নিয়ে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার চ্যানেল আই-এর এক অনন্য সৃষ্টি।

প্রকৃতি ও জীবন
চ্যানেল আই-এর ব্যাপক সমাদৃত কয়েকটি অনুষ্ঠানের একটি হচ্ছে ‘প্রকৃতি ও জীবন’। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রথম ধারাবাহিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

বাঙালি ঐতিহ্য ও মেলা
পরিবর্তিত সময়ে আবহমান বাংলার অনেক ঐতিহ্য যখন হারিয়ে যেতে বসেছে তখন চ্যানেল আই তার নিজস্ব প্রাঙ্গণে বাঙালি জীবনের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে মেলার আয়োজন করে আসছে। বৈশাখী মেলা, রবীন্দ্র মেলা, নজরুল মেলা, পৌষ মেলা, বিজয় মেলা, বাংলা বর্ষবরণ এগুলোর অন্যতম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চ্যানেল আই প্রকৃতি মেলা, ‘আদিবাসী মেলা’। বর্ষা উৎসব, শরৎ উৎসব, শীত উৎসব, বসন্ত উৎসব-এর আয়োজন চ্যানেল আই-এর পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ার ফলে সারাবিশ্বের বাঙালি দর্শক বাংলার জাতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পান। বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্রের উপস্থাপনা দেশ-বিদেশের নতুন প্রজন্মকে ঋতু সংবেদনশীল করে তোলে।  

চ্যানেল আই ও সুরের ধারার যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলা নববর্ষ ১৪১৯’ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজার কণ্ঠশিল্পীর গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন বর্ষ বরণ। বাংলা বর্ষের সূচনায় এ এক বিশাল আয়োজন, যা আমাদের সাংস্কৃতিক শক্তিকে তুলে ধরে, সংস্কৃতিকে গতিশীল করে ও বাঙালির ঐতিহ্যকে বিশ্বায়নের সুযোগ করে দেয়।

সবাইকে শুভেচ্ছা
চ্যানেল আই এছাড়াও অনেক দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠানের নিয়মিত আয়োজন করে আসছে, যা সমাজে একটি সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে অনুকূল ভূমিকা রাখছে। এভাবে একে একে ষোলোটি বছর অত্যন্ত সফলভাবেই পেরিয়ে এসেছে চ্যানেল আই। এই সফলতার পেছনে রয়েছে বহু মানুষের শ্রম, নিষ্ঠা, স্বপ্ন আর উদ্যোগ। সেই সঙ্গে ছয়টি মহাদেশের বাঙালি দর্শক শ্রোতারা তো আছেনই। যারা সবসময়ই শক্তি ও সাহস যুগিয়ে চলেছেন চ্যানেল আইকে, স্বাগত জানাচ্ছেন তার যুগোপযোগী প্রতিটি উদ্যোগকে। যে দায়বদ্ধতা নিয়ে শুরু হয়েছিল এর পথচলা, সেখান থেকে সরেনি চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ এটাই আশার কথা। ভবিষ্যতেও দেশ ও সমাজের প্রতি তাদের এই দায়বদ্ধতা অব্যাহত থাকবে, তারুণ্যের শক্তিকে বিকশিত করবে ও তথ্যের বস্তুনিষ্ঠ সঞ্চালনার মাধ্যমে দর্শকদের তথ্যায়িত রাখবে, সেটাই প্রত্যাশা। সতেরো বছরে পদাপর্ণের শুভলগ্নে দেশ-বিদেশের অগণিত দর্শকসহ চ্যানেল আই-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাই। চ্যানেল আই-এর প্রাণ ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভ কামনা।

(চ্যানেল আই’র ১৭ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলোর ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত)