আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের নাকের ডগায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বাংলাদেশের সক্ষমতার (সাবালকত্বেরও) দৃষ্টান্ত। সংশয়বাদীদের অনেকেরই মনে ছোটো ছোটো কিছু প্রশ্ন সবসময়ই উঁকিঝুকি মেরেছে।
বাংলাদেশ যে কেবল বড় প্রকল্পেই উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নেয়, তা তো নয়, অনেক ছোট প্রকল্পে, স্থানীয় সরকারের প্রকল্পেও বিশ্বব্যাংকের সহায়তা আছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর সেই প্রকল্পগুলো ঠিকঠাক মতো চলছেতো?
না চলার কোনো কারণ নেই। কিন্তু সংশয়বাদীদের মনে তো সংশয়ই কাজ করে। পদ্মাসেতুর কাজে হাত দেওয়ার পর বাংলাদেশের ছোটো মাঝারি নানা প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নের চালচিত্র নিয়ে মিডিয়াতে কখনো তেমন কোনো প্রতিবেদন চোখে পড়েনি। কোনো ফোরামে এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। ফলে সেই প্রকল্পের অর্থছাড়, কাজের অগ্রগতি আলোচনার বাইরেই থেকে গেছে।
ছোটো-মাঝারি প্রকল্পের চালচিত্র জানার সুযোগ না হলেও দেশের বড় প্রকল্পগুলোর অবস্থাটা স্বয়ং অর্থমন্ত্রীই জানিয়ে দিলেন আমাদের। ‘টাকা চাই, বড় প্রকল্পের জন্য টাকা চাই’- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই কথাগুলোই বলছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি কথাটা এক দুইবার বলেই ক্ষ্যান্ত হননি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবারই বলছিলেন কথাটা।
আইএমএফের নতুন নির্বাহী পরিচালক সুবীর গোকর্ণের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্পষ্টভাবেই তার চাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
আইএমএফের নতুন নির্বাহী পরিচালক সুবীর গোকর্ণের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু তেমন একটা তার বক্তব্যে ছিলো না। সত্যি বলতে কি- বৈঠকটিকে তিনি তেমন একটি গুরুত্বও দেননি। কিন্তু তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন- তার টাকার দরকার এবং বিশ্বব্যাংক- আইএমএফ এর টাকাটাই দরকার। গুরুত্ব দিয়েই তিনি তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে, বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে। ‘বড়বড় এই প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন নিয়ে কি কোনো সমস্যা হচ্ছে? কোনো অনিশ্চয়তা?’
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “এখন নানা স্থান থেকে তহবিল আনা দরকার বাংলাদেশের।” তবে, বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর যে কোনো সম্ভাবনা নেই- সেটাও তিনি অকপটে জানিয়েছেন। বলেছেন, “উই ওয়ান্ট মোর ফ্রম দেম। দিস ইজ দ্য বেস্ট মানি দ্যাট উই ক্যান গেট।”
বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফর কারো সঙ্গে সরকারের কোনো দেখা সাক্ষাত হলেই আমাদের মনে প্রথম যে প্রশ্নটি জাগে- কতো দিচ্ছে? দিচ্ছেতো কিছু? সুবীরের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদকিদের কেউ অর্থমন্ত্রীকে এ ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন কী না, তা জানা যায়নি।
তবে অর্থমন্ত্রী যে এই মানসের সঙ্গে পরিচিত, সেটা তিনি বুঝিয়েছেন নিজে থেকেই দেওয়া না দেওয়া নয়, চাওয়া এবং পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বার্তা উচ্চকণ্ঠে প্রকাশের মাধ্যমে।
আমরাতো এতোদিন কেবল উন্নয়নের কথাই শুনে আসছি। বাংলাদেশ যে বিশ্ব পরিমণ্ডলে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে, উন্নয়নের মহাসড়ক (হাইওয়ে) ধরে ধাই ধাই করে এগিয়ে চলেছে- এসব কথা শুনতে শুনতে আমরাও স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে গেছি। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য খানিকটা যেন ধাক্কা দিলো আমাদের। অর্থায়নের কোনো সংকটে নেইতো আমরা?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের
নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে
প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)