রোহিঙ্গা সংকট অব্যাহত থাকলে চরমপন্থা আরও শক্তিশালী হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সমস্যার দ্রুত সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চির নির্লিপ্ততার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
রাখাইন পরিস্থিতি, বিশেষ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বৃহস্পতিবার চুড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মিয়ানমারে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি।
পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে চলা বৈষম্যের কারণে, আইন ও জাতীয় নীতিমালাসহ সবকিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের অভিষ্যত অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতি রাখাইনসহ পুরো অঞ্চলে মৌলবাদের উত্থানের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চির অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে এটিকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে ইয়াংহি লি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়াতেই সংকটের শুরু।
সহিংসতা অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। গত দুই মাসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং লেইনের সাথে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে উদ্বেগ জানিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সহায়তা করার আহ্বান জানান টিলারসন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নয়ের্ট এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংকে টেলিফোন করে টিলারসন ‘রাখাইন রাজ্যে চলা মানবিক সংকট এবং নৃশংসতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মন্ত্রী রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধে সরকারকে সহযোগিতা এবং এই সংকটে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিতে বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছে।’
এর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সকল আমন্ত্রণ বাতিল করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর চালানো নৃশংসতার জন্য কেউ দায়ী হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা অপরিহার্য। (সেটা) যেকোন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তায় নিযুক্ত সদস্য হোক না কেন? এর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান সহিংসতা বন্ধে বার্মিজ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করা ও দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য সকল রকম সেনা সরঞ্জামাদি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চলমান নিষেধাজ্ঞাসহ জবাবদিহিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়।