সুলতান মোঃ মনসুর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হতে বিএনপির ধানের শীষ মার্কা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে৷ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের ৮ জন সাংসদ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শপথও নেননি৷ কিন্তু সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্টের দুই সাংসদের শপথ গ্রহণের আগ্রহ সকল সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়৷
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সাংসদ সুলতান মোঃ মনসুর এখন বলছেন, আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। গণফোরামের কেউ নই, বিএনপিরও কেউ নই। দেশের মানুষ আমাকে যে পরিচয়ে এতকাল ধরে চিনে আসছে, সে অনুযায়ী অবশ্যই আমি জনগণের কথা বলার জন্য সংসদে যাব।
একাদশ জাতীয় সংসদে ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রার্থী সুলতান মনসুর মৌলভীবাজার-২ আসনের নৌকার প্রার্থী এম এম শাহীনকে পরাজিত করে জয়ী হন৷ নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকার নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও বিএনপিসহ ঐক্য প্রক্রিয়ার নির্বাচিতরা নেননি৷
সুলতান মনসুরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছেন, তার মতো রাজনীতিবিদ কখনোই জনগণের প্রতিনিধি হয়ে ঘরে বসে থাকতে পারেন না। যেকোনও পরিস্থিতিতে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিশ্চয়ই ইতিবাচক মনোভাব দেখাবেন তিনি৷
সাংসদ হিসাবে ২০ দল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও নিজ দল গণফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিতে যাচ্ছেন তিনি৷ এমন খবরই সংবাদপত্রের পাতায় শোভা পাচ্ছে৷ শপথের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে সুলতান মোঃ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যে পরিচয়ে জানে, আমি সে পরিচয়ে অবশ্যই সংসদে যাব। তবে যোগ দেয়ার ব্যাপারে দিন-ক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সময় হলেই দেখতে পাবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে ঐক্যপ্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে নির্বাচনে গিয়েছি। আমি গণফোরামের কেউ নই, বিএনপিরও কেউ নই। তিনি বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমি জনগণের দাবি তুলে ধরার জন্যও সংসদে জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য যাব। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যে পরিচয়ে এতকাল ধরে জেনে আসছে সে অনুযায়ী অবশ্যই যথাসময়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেব, সংসদে যাব।
সুলতান মনসুরের এই ঘুরে যাওয়া সিদ্ধান্তের খবর আজ টক অব দ্য কান্ট্রি৷ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী ফ্রন্টের কেউই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন না। কিন্তু গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ) আসনের সুলতান মোঃ মনসুর ও সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান শপথ গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করলে ৭ জানুয়ারি মতিঝিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে নেতারা বৈঠক করে শপথ না নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
তবে তখনকার সেই সিদ্ধান্ত মানতে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী সুলতান মোঃ মনসুর ও উদীয়মান সূর্য প্রতীকের মোকাব্বির খান রাজি ছিলেন না বলে খবর বেরিয়েছিল৷ সুলতান মনসুরের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সে খবরেরই সত্যতা প্রমাণ করল৷ এদিকে গণফোরাম দলটি বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। একই সঙ্গে জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল, এখনো সেই ঐক্য অটুট আছে বলে জানানো হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু এক বিবৃতিতে বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তথা জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য সুদৃঢ় ও অটুট আছে। গণফোরাম তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন কোন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে যোগদান করছে- এ ধরণের সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, যা অসত্য ও ভিত্তিহীন। সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে গণফোরামে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
গণফোরাম নেতা সুলতান মনসুর বলছেন, যখন শপথ নেব তখন জানতে পারবেন। তবে শপথ নেয়ার বিষয়ে অবশ্যই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আবার এমন খবরও বের হচ্ছে সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগে ফিরছেন। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে শিগগিরই রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন তিনি। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করতে সাবেক এই ভিপিকে বিশেষ দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে সুলতান মনসুর আহমেদও বলছেন, আমি তো ছাত্রলীগের প্যানেল থেকেই ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে নেতা বানিয়েছেন। ছাত্রলীগের প্যানেলকে নির্বাচিত করার কোনো দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব এলে তা অবশ্যই গ্রহণ করবো।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো আওয়ামী লীগ ছাড়িনি। আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কারও করেনি। সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি ভবিষ্যতে দেখা যাবে। সুলতান মনসুর বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। আমার শেষ ঠিকানা বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা। এখানে কোনো আপস নেই।
এ বক্তব্যের পরে গণফোরামের কয়েকজন নেতা সুলতান মনসুরের গণফোরামের সদস্যপদের ফরম ফেসবুকে পোস্ট করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, তিনি গণফোরামের সদস্য। আর তাছাড়া তিনিতো ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেনই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বাদ পড়েন দলীয় পদ থেকে। সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিতর্কিত ভূমিকার জন্যই তার এই অবস্থা হয় বলে কথিত রয়েছে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন হয় তার৷
সাংসদ হিসেবে শপথ নেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত গ্রহণ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গণভবনে যাওয়াও উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলছেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করায় জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সুলতান মনসুর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলে বিএনপি তার সদস্য পদ বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিলে তার সদস্য পদ থাকবে না৷
আসলে কী ঘটতে চলছে? বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ এন্টি ভোটারদের ভোট নিয়ে তবে কি সুলতান মোঃ মনসুর আওয়ামী লীগে ফিরছেন?জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তবে কি দুই গণফোরাম নেতা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে যাচ্ছেন? তারা কি বহিষ্কৃত হচ্ছেন গণফোরাম থেকে ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে? আর এই দুই সাংসদের সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকা নিয়ে শুরু হতে চলেছে নানামুখী আলোচনা? রাজনীতির রঙ্গলীলায় সুলতান মনসুর কোন রঙ্গ নিয়ে আসছেন?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)