একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরের দিন থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মিত্র দল ঘটা করে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানালেও অনানুষ্ঠানিক প্রস্তুতিতে বিএনপিসহ তাদের মিত্ররাও পিছিয়ে নেই। দু’দিন পরেই তারা নিজেদের অবস্থান জানাবে। সব মিলিয়ে দেশে নির্বাচনী আমেজ আসতে শুরু করেছে।
দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পেতে মাঠে এবং মাঠের বাইরে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীকে কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ তারা। কিন্তু সেই ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা থেকে অনেক সময় ঘটে মর্মান্তিক ঘটনা, যা সেখানেই থেমে থাকে না, তা থেকে জন্ম নেয় আরো অনেক ঘটনার।
অস্বীকার করার উপায় নেই, নির্বাচন ঘিরে নানা শঙ্কা রয়েছে। কী হচ্ছে? কী হবে? শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে তো? এমন হাজারো প্রশ্নের মধ্যেই শনিবার রাজধানীতে ঘটে গেল প্রাণঘাতি এক সংঘর্ষ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের মধ্যেকার ওই সংঘর্ষে নিহত হয় দুই শিশু শ্রমিক। তাদের একজন নির্মাণশ্রমিক আরেকজন প্রিন্টিংয়ের কাজ করত।
এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, নির্বাচনকে ঘিরে প্রাণহানি কাম্য নয়। কিন্তু নির্বাচনী প্রত্রিয়ার শুরুতেই রক্তপাতের ঘটনা ব্যাপক সহিংসতার পূর্বাভাস কি না সেই প্রশ্ন এখন অনেকের।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনসহ অনেক স্থানীয় নির্বাচন হতে দেখেছি আমরা। এসব নির্বাচনে বিশেষ করে ইউপি এবং উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। আমরা চাই না, সংসদ নির্বাচনেও সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। বিশেষ করে আগেরবার সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘটনা ভুলে সবগুলো দল যখন এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন একটা সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ আমাদের কাম্য।
এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। কারণ, আজকের যে ঘটনা; তাতে কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করার ফলেই ঘটেছে বলে আমরা মনে করি। প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশীই মিছিল, সমাবেশ করতে পারবে না – এটা আইন। একদিন আগেই নির্বাচন কমিশন সচিব বিষয়টি মনেও করিয়ে দিয়েছেন।
নির্বাচনের আচরণবিধি মানানোর কাজটি স্পষ্টই নির্বাচন কমিশনের। আমরা মনে করি, এই ঘটনার দায় তারা এড়াতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে।