ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে গেলে অতিরিক্ত সময় দিতে হয়। ফলে পরিবারের সদস্যদের বেশি সময় দেওয়া যায় না। তাই ব্যাংকের ৪০ শতাংশ কর্মী এ খাতে কাজ করতে চায় না।
বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম ডিটোরিয়ামে ‘ইন্টারন্যাল অডিট অ্যান্ড পারফরমেন্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে কর্মীদের আগ্রহ খুব কম। ৪০ শতাংশ ব্যাংকার নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় না। তারা মনে করেন, এ বিভাগে কাজ করলে তুলনামূলক সময় বেশি ব্যয় হয়। ফলে পরিবারের সদস্যদের বেশি সময় দেওয়া যায় না। মাত্র ১৯ শতাংশ কর্মী নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে চায়। তারা মনে করেন, শাখা পর্যায়ে কাজ করলে টার্গেট পূরণের অস্বাভাবিক চাপ রয়েছে। এজন্য অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করলে চাপমুক্ত থাকা যাবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য আব্দুল কাইয়ুম মোহাম্মদ কিবরিয়া। গবেষণা দলে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক ড. মহব্বত হোসেন, প্রভাষক মাকসুদা খাতুন এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের প্রধান কামাল হোসেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও কমপ্ল্যায়েন্স বিভাগে (আইসিসিডি) জনবল সংকট প্রকট। এ কারণে এ বিভাগের কর্মীদের ওপর চাপ বেশি থাকে। মোট কর্মীর মাত্র ১ দশমিক ৫২ শতাংশ আইসিসিডি বিভাগে কর্মরত। একজন কর্মীর ওপর চারটির বেশি শাখা নিরীক্ষার দায়িত্ব থাকে। আর ২২টির মতো শাখার দায়িত্ব থাকে একটি অডিট টিমের ওপর। ইন্টারন্যাল অডিট অ্যান্ড পারফরমেন্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক গবেষণার জন্য ব্যাংকিং খাতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৮৯ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে এ প্রতিবেদন করেছে বিআইবিএম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইসিসিডি’র জন্য আলাদা গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা সঠিকভাবে হলে জনগণের আমানতের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সততা এবং নৈতিকতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এতে ব্যাংকে ঋণ সংক্রান্ত ঝুঁকি অনেকাংশে কমবে।
প্রাইম ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যেক ব্যাংকের শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার জন্য অডিট বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তা চায় না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বড় ঋণ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। কোন ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণে এক শতাংশ বোনাসের ঘোষণাও দেন; যা ঠিক নয়।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা আরও শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। এ বিভাগের কর্মীদের আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নিরীক্ষা বিভাগের কর্মীদের আরও দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি-বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অডিটের বিষয়ে অনেক ছাড় দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাংকিং খাতের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানই সফলতা অর্জন করতে পারে না। অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকের নিরীক্ষা আরও জোরদার করা উচিত।