চলতি বছরের মে মাসে অভিনেত্রী ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তীকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন তার স্বামী খোরশেদ আলম। এরপর ২২ জুলাই এই ডিভোর্স লেটারকে অবৈধ দাবি করে ঢাকার পারিবারিক আদালতে ‘দাম্পত্য সত্ত্ব পুনরুত্থান’ মামলা করেন শ্রাবন্তী। গেল মঙ্গলবার তাদের দুই পক্ষকেই ডাকে আদালত। যেখানে দুই সন্তান নিয়ে হাজির ছিলেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী।
আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর সেখানে আবেগ প্রবন এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। যার কিছুটা ফুটে ওঠে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর ফেসবকু স্ট্যাটাসে। শ্রাবন্তীর সঙ্গে আদালতে যাওয়া চয়নিকা চৌধুরী আদালত প্রাঙ্গণের বর্ণনা দেন এভাবে, ‘‘আমি আমার মা/ বাবা কে নিয়ে এক সাথে থাকতে চাই। আমি ব্রোকেন ফ্যামিলি চাইনা। তোমরা কি কিছু করতে পারো আমাদের জন্য? ছলছল চোখে এক নিশ্বাসে কথা গুলো বিজ্ঞ জাজ কে বললো ৭ বছরের রাবিয়া আলম।’’
শ্রাবন্তী ও খোরশেদ আলমের মেয়ে রাবিয়া আলম। বাবা-মায়ের ডিভোর্সের মামলার শুনানির দিনে মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। আর এদিন দুই পক্ষ ও তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে খোরশেদ আলমের ডিভোর্স নোটিশটি স্থগিত করে আদালত। যে বিষয়টি বুধবার বিকালে চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর আইনজীবী ফওজিয়া করিম ফিরোজ ।
ডিভোর্স স্থগিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে সিনিয়র আইনজীবী ফওজিয়া বলেন, আমরা আদালতে ডিভোর্স স্থগিত করেছি। রুলসে আছে, স্ত্রী যেখানে অবস্থান করবেন সেখানের চেয়ারম্যান কিংবা যে শহরে অবস্থান করছেন সেখানে আপনাকে নোটিশ পাঠাতে হবে। কিন্তু শ্রাবন্তীর স্বামী তা করেনি। তিনি যখন ডিভোর্স লেটার বগুরাতে পাঠালেন, তখন কিন্তু শ্রাবন্তী আমেরিকায়। ডিভোর্স স্থগিত করতে এটা একটা গ্রাউন্ড ছিলো আমাদের। আর বগুরাও শ্রাবন্তীর স্থায়ী ঠিকানা নয়, তার স্থায়ী ঠিকানা নঁওগা। সেখানেও কিন্তু তিনি ডিভোর্সের নোটিশ পাঠাননি। এদুটো গ্রাউন্ড আমাদের পক্ষে ছিলো।
শ্রাবন্তীর স্বামী ডিভোর্স কার্যকরের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন জানিয়ে এই আইনজীবী আরো বলেন, সব কিছুর পরেও আমাদের বিপক্ষ আইনজীবী নানা যুক্তি দিয়ে শ্রাবন্তীর তালাক কার্যকরের কথা বলেন। তিনি মুসলিম আইনের কথাও তুলে ধরেন। মুসলিম আইনে স্ত্রীকে তালাক দিতে কোনো কারণ লাগে না। এটা তিনি নানা ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা উল্টো তাদের কোরানিক ল’তে তালাকের পাল্টা যুক্তি দিয়েছি। কোরানিক ল’তে তালাক নিয়ে অনেক ধরনের কথা আছে। দেন মোহরের টাকা পরিশোধ, মেইনটেইনেন্স এবং বাচ্চা থাকলে তাদের খরচতো দিতেই হবে। এগুলো না সুরাহা করে কোরানিক ল’তেওতো উনি তালাক দিতে পারেন না।
শ্রাবন্তীর ‘বেপরোয়া স্বভাব’-এর জন্য তাকে তালাক দেয়া হয়েছে, এমনটাই উল্লেখ ছিলো শ্রাবন্তীর স্বামীর জবানিতে। জানালেন শ্রাবন্তীর আইনজীবী। বললেন, ম্যারিজ ইজ অ্যা সোশাল ইনস্টিটিউশান। তো সোশাল ইনস্টিটিউশনেরতো কিছু নরমস আছে। আমি মনে করলাম আর পোস্টঅফিসের বক্সে তালাক নামা পাঠিয়ে দিলাম, এটাতো হতে পারে না। আপনারতো বাচ্চা আছে। তাদের কী করবেন না করবেন এটাতো আগে সুরাহা করতে হবে। ডিভোর্স দিলেই হয়ে গেলো! এসবের জবাবে তারা(শ্রাবন্তীর স্বামী) পাঠিয়েছে, বেপরোয়া স্বভাবের জন্য শ্রাবন্তীকে তালাক দেয়া হয়েছে। যা কোনো যৌক্তিক উত্তর নয়। আর এগুলো আমরা আদালতকে বলেছি। তখনই আদালত জানিয়েছে, এই মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডিভোর্স স্থগিত।
ডিভোর্স স্থগিতের পর এখন তাহলে কী করবেন? শ্রাবন্তী ও তার স্বামী চাইলে কি তারা মিমাংসা করে নিতে পারেন?-এমন প্রশ্নে শ্রাবন্তীর আইনজীবী বলেন, আমরাতো স্থগিত করলাম। এখন শ্রাবন্তী ও তার স্বামীর উপর সবকিছু। আমরা আমাদের দিক থেকে শ্রাবন্তীকে সেভাবেই পরামর্শ করেছি।
শ্রাবন্তীর মামলা নিয়ে উচ্ছ্বসিত আইনজীবী বলেন, আমরা এই কেইস নিয়ে খুবই হ্যাপি। কারণ শ্রাবন্তীর স্বামী ভেবেছিলো ডিভোর্স খুবই ইজি একটি ব্যাপার। কিন্তু আমরা এটা প্রমাণ করেছি, এটা এতো সহজ নয়। কোর্টে এসে তাকে সবার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে এবং তার যে উদ্ধত আচরণ সেখানে সে একটা হোচট খেয়েছে। আমার কথা হলো এটি একটি দৃষ্টান্ত। প্রত্যেক স্বামী ও স্ত্রীর এটা স্মরণ রাখা উচিত। বিবাহ গড়া ভাঙার কিছু নরমস আছে, এগুলো ভুললেতো চলবে না।