কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নবনির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় এক শিক্ষকের কাছে ব্যাখ্যা এবং প্রমাণ চেয়েচিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চিঠি পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম মো. আসাদুজ্জামান, তিনি নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে তার লেখা অভিযোগের প্রমাণ লিখিত আকারে সাত দিনের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে চিঠি পাওয়ায় এদিন দুপুর সাড়ে তিনটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ওই ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন ওই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগের শুরুতেই প্রথমে টেন্ডারে অনিয়ম হয়। পরে মৃণাল হককে ডেকে এনে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। হঠাৎ করে রাতের বেলায় কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে পাথরের পরিবর্তে সাধারণ ইট ব্যবহার করা হয়। এসব দেখে শিক্ষকরাও প্রতিবাদ করেন। এরপর নিম্ন মানের টাইলস ব্যবহার করার কারণে উপাচার্য নিজেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন। পরে মৃণাল হক সেই টাইলস পাল্টাতে বাধ্য হন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নকশাতে মূল ভাস্কর্যের উচ্চতা ১৫ ফিট হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে করা হয় ১১ ফিট। ভিতরে ফাঁপা রাখা হয়। ওই ভাস্কর্য নির্মাণের বিশ লাখ টাকার পাঁচ লাখ টাকার মধ্যেই কাজ শেষ করা হয়। এ নিয়ে গত ৩১ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট দেন সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান।
মো. আসাদুজ্জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ফেসবুকের পোস্টে আমি মূলত জাতির জনকের ভাস্কর্য নির্মাণে দুর্নীতি ও গাফিলতির কথা লিখি। সেখানে ভাস্কর মৃণাল হকের বিরুদ্ধে বলেছি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে উপাচার্য এই অনিয়মের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না বলে উল্লেখ করি। আর এজন্যই আজকে আমাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে জাতির জনকের ভাস্কর্য নির্মাণে এমন গাফিলতি দেখে চুপ থাকি কি করে? প্রশ্ন করেন তিনি।
এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও সমস্যা রয়েছে। সর্বস্তুরে দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরে গেছে। তাই ব্যক্তিগত জায়গা থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছি। এখন থেকে প্রতিদিন প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। কর্মদিবস শেষ করে প্রতিবাদ করবো। কেউ না আসলে একাই প্রতিবাদ করবো। জাতির জনকের ভাস্কর্য নিয়ে দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলা হয়েছে। আর চুপ থাকা সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ যদি কেউ করেন, তাহলে নিশ্চই তার কাছে প্রমাণ বা তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। যদি কেউ সেই তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেন তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। আর যদি না দিতে পারেন, তাহলে মিথ্যা অভিযোগ আনার অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’
কুবিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের পর রাতের অন্ধকারে ওই ভাস্কর্য মাটিতে সরিয়ে ফেলা হয়। পরে আবার সেটিকে পুনঃস্থাপিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।