নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারের জন্য কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার করা রিটে পক্ষভুক্ত হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: ‘যেহেতু নাইকো দুর্নীতি মামাটি দুদক করেছে সেহেতু এ মামলা সংক্রান্ত রিটে দুদককে পক্ষভুক্ত করার জন্য আজ আবেদন করি। এরপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রিটে দুদককে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এ সময় রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী দুদককে পক্ষভুক্ত করে রিটের পেপার সরবরাহ করেন। এরপর আদালত রিটটি আগামীকালের শুনানি তালিকার শীর্ষে থাকবে বলে দিন ধার্য করেন।’
আজ সোমবার আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহামদ, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারের জন্য কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬ মে হাইকোর্টে রিট করেন কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া।
আর গত ২১ মে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারের জন্য কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে আইন সচিব বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান হয়। সেই নোটিশের জবাব না পেয়ে আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬ মে হাইকোর্টে রিট করেন কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া।
রিটের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘এ রিট আবেদনে নাইকো মামলার বিচারের জন্য কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এবং আদালত স্থানান্তরের বিষয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে। আর গত ১২ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা আইন এবং সংবিধান পরিপন্থী। কারণ, সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, কোনো বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে। আর ফৌজদারী কার্যবিধিতে (সিআরপিসি) স্পষ্টভাবে বলে দেয়া আছে যে কোথায় কোথায় আদালত স্থানান্তরিত হতে পারে। এক্ষেত্রে সিআরপিসির ৯ এর (১) ও (২) ধারায় এটা উল্লেখ নাই যে কারাগারে কোর্ট স্থাপিত হতে পারে। তাই কারাগারের একটি কক্ষে উন্মুক্তভাবে বিচার হতে পারে না বিবেচনায় ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আসায় হাইকোর্টে রিটটি করা হয়েছে।’
এদিকে গত ১৯ মে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে ওইদিন শুনানিতে হাজির করা হয়নি। পরবর্তীতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য ৩০ মে দিন ধার্য করেন।
অন্যদিকে দুর্নীতির পৃথক দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে ছিলেন। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর তেজগাঁও থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নাইকো মামলাটি করে। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
তবে আসামিপক্ষ এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ জুলাই এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। এর প্রায় সাত বছর পর ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট সে রুল নিষ্পত্তি করে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করে আদালত থেকে জামিন নেন খালেদা জিয়া।