শুরুটা মারপিট দিয়ে। তখন নাম ছিল পারভেজ চৌধুরী। এরপর আসেন অভিনয়ে। প্রয়াত অভিনেতা জসিম তার নাম দিয়েছিলেন গাঙ্গুয়া! সবমিলিয়ে চলচ্চিত্রে প্রায় ৪৩ বছরের ক্যারিয়ার গাঙ্গুয়ার।
রুপালি পর্দার সুপরিচিত এ অভিনেতা আগের মতো সিনেমায় ব্যস্ত নন। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে গাঙ্গুয়া বলেন, ‘কেউ কাজে ডাকে না, আমার হাতে কোনো ছবি। সর্বশেষ ‘পাগলামি’ ছবিতে কাজ করেছি। এখন সিনেমায় কাজ না করলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেজ শো করছি।’
সোমবার বিকেলে এফডিসিতে ফিল্ম ক্লাবের নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে এসে এসব কথা বলেন গাঙ্গুয়া। তিনি বলেন, আট শতাধিক সিনেমায় কাজ করেছি। উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে মাস্তান রাজা, কালিয়া, প্রেম গীত, নূরা পাগলা, জ্যান্ত কবর, ক্ষুধার জ্বালা, লাল বাদশা, ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম, তোকে ভালোবাসতেই হবেসহ অসংখ্য ছবি।
জয়পুরহাটে জন্ম গাঙ্গুয়ার। আট ভাই চার বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। প্রয়াত নায়ক জসিম তার নাম পারভেজ চৌধুরী থেকে গাঙ্গুয়া দেন। তিনি বলেন, জসিম ভাই বলেছিলেন এই নাম দিকে ভিলেন হিসেবে আমাকে নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি যা বলেছিলেন তাই হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে আমি এ নামেই পরিচিতি পেয়েছি। তিনি আমার ওস্তাদ। এরপর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ম্যাক্সিমাম ছবিতে আমি ফাইটে কাজ করেছি।
চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে গাঙ্গুয়া বলেন, গত একযুগ ধরে শুধু প্রেমের ছবি বানানো হচ্ছে। ফ্যামিলি ড্রামার ছবি কমে গেছে। আগে ফ্যামিলি ড্রামার ছবি হতো। সেগুলোতে মানুষ নিজেদের খুঁজে পেত। কিন্তু এখন মানুষের কাছে এইসব ছবি একঘুয়েমি ঠেকছে। তাই মানুষ ছবি দেখছে না। এছাড়া হাতের মুঠোয় ইন্টারনেটের কারণে মানুষ সারাবিশ্বের সবকিছু দেখছে যেটা আগে ছিল না। এসব কারণে মানুষ আর হলে গিয়ে ছবি দেখছে না।
গাঙ্গুয়ার ৪৩ বছরের চলচ্চিত্র জীবনের উপলব্ধি মানুষের কাছে নিজের পরিচিতি। এছাড়া কিছু অপ্রাপ্তিও রয়েছে। তিনি বলেন, শিল্পীদের জীবনে শেষে যোগফল শুন্য। আগে আমাদের লেখাপড়া কম ছিল। না বুঝেই যে কোনো কিছু করতাম। শুধু অভিনয় করে জীবনের শেষে এসে এজন্য কষ্ট সইতে হয়। অবশিষ্ট বলে কিছু থাকেনা। কারণ অভিনয় সেক্টরে পেনশনের ব্যবস্থা নেই। শিল্পী চলচ্চিত্রে ৫০ বছর কাজের পর আরও ৩০ বছর বাঁচলে ওই পরের সময়টা তার কষ্টে কাটে। কারণ তার সঞ্চয় থাকেনা। আমার কোনো কষ্ট না থাকলেও চারপাশে ভাই বন্ধু অনেক কষ্টে আছে। এজন্য মাঝেমধ্যে খুব খারাপ লাগে।
চলচ্চিত্রে মন্দ মানুষ হলেও বাস্তবে গাঙ্গুয়া ঠিক তার উল্টো। তিনি বলেন, আমি নামাজ, রোজা পালন করি। সিনেমার বাইরে আর পাঁচটা মানুষের মতো সাধারণ আমি। আমার সংসার আছে। একমাত্র মেয়ে লেখাপড়া শিখেছে। একটি ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করে একটি কোরিয়ান স্কুলে শিক্ষকতা করছে। আমার স্ত্রী গৃহিণীর পাশাপাশি বিউটিশিয়ান। অভিনয় ছাড়া আমার কোনো পেশা নেই। সংসার জীবনে আমি ভীষণ সুখী একজন মানুষ।
ছবি: নাহিয়ান ইমন