চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড: কে গড়বে ইতিহাস

১৯৯২ সালে শেষবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল ইংল্যান্ড। মরগানের বয়স তখন মাত্র ছয় বছর। স্বাগতিকদের বর্তমান স্কোয়াডের অনেকের তখন জন্মই হয়নি! ২৭ বছর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে শিরোপার স্বপ্ন চূর্ণ হয়েছিল ইংলিশদের।

ফাইনালে এবার মিশন লর্ডস, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ঘরের মাঠ। শিরোপা জেতার এরচেয়ে ভালো সুযোগ আর পাবে কি ইংল্যান্ড?

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

অন্যদিকে গত বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে হৃদয়ভাঙা নিউজিল্যান্ড। দগদগে সেই ক্ষত সারানোর মোক্ষম সুযোগ কিইউদের সামনে। রোববার বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের ফাইনালে যে-ই জিতুক ২৩ বছর পর নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাবে ক্রিকেটবিশ্ব।

ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার পথে শুরু আর শেষটা ছিল দুর্দান্ত। দারুণ শুরুর পর মাঝপথে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায়ের শঙ্কায় পড়েছিল স্বাগতিকরা। তবে লিগপর্বের শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটতে সমস্যা হয়নি ইয়ন মরগানের দলের। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে তো উড়িয়েই শিরোপার মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে থ্রি-লায়ন্সরা।

সেখানে সেমিফাইনালে ওঠার পথে শুরুটা দুর্দান্ত ছিল নিউজিল্যান্ডেরও। তবে শেষটা ছিল হতাশায় মোড়ানো। ভারত ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে গেলেও শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সাউথ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিগপর্বে টানা জয় পায় কিউইরা। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়।

তবে শ্রেয়তর রানরেটের সুবাদে টেবিলের চতুর্থ দল হিসেবে সেমিতে স্থান করে নেয় কিউইরা। তাদের সমান ১১ পয়েন্ট থাকলেও তাই ছিটকে যায় পাকিস্তান। সেমিতে দুর্দান্ত প্রতাপে ভারতকে হারিয়ে শেষে ফাইনালের টিকিট কাটে কেন উইলিয়ামসনের দল।

ইতিহাস-পরিসংখ্যান
মহারণের আগে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বকাপের মঞ্চে ৯ বারের সাক্ষাতে ফলাফলের পাল্লাটা নিউজিল্যান্ডের দিকেই ভারি। কিউইদের ৫ জয়ের বিপরীতে ইংল্যান্ড জিতেছে ৪টি ম্যাচে।

ইংল্যান্ডের শেষ কিউই-বধটি চলতি বিশ্বকাপেই। লিগপর্বে এই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে মরগানের দল। চেস্টার-লি-স্ট্রিটে কিউইদের ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল ইংলিশরা।

সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ৯০ বারের সাক্ষাতের ইতিহাস বলছে এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছে দুই দেশের মধ্যে। নিউজিল্যান্ডের ৪৩ জয়ের বিপরীতে ইংল্যান্ড জিতেছে ৪১টি ম্যাচে। দুটি ম্যাচ টাই হয়েছে, চারটি পরিত্যক্ত।

বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান ও হেড-টু-হেডের ফলাফল, লর্ডসে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসই দিচ্ছে শিরোপার মহারণ।

ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বনাম নিউজিল্যান্ডের বোলিং
শিরোপার লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বনাম নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ের মহারণ নাম দিলে ভুল হবে না! ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিংলাইন স্বাগতিকদের এগিয়ে রাখছে। তবে বিশ্বমানের বোলিং অ্যাটাক নিয়ে নিউজিল্যান্ডও আদর্শ প্রস্তুতি সেরেই লর্ডসে নামছে।

তবে দিনশেষে দুদলের এই ব্যাটিং বনাম বোলিং দ্বৈরথই শিরোপা নির্ধারণে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে। লর্ডসে সর্বশেষ দুটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২০০৮ সালে ৫১ রানে এবং ২০১৩ সালে ৫ উইকেটে জয় পায় কিউইরা। মহারণে নামের আগে তাই ইতিহাসও কিউইদের অনুপ্রেরণাই দেবে।

চোখ থাকবে যাদের উপর
জেসন রয়: ইনিংসের শুরুতেই ঝড় তুলতে পারদর্শী জেসন রয়। বিশ্বকাপের চলতি আসরে দারুণ ছন্দে রয়েছেন এ ইংলিশ ওপেনার। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দিয়ে ফাইনালের প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন রয়। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন তিনি।

কেন উইলিয়ামসন: ঠাণ্ডা মাথার অধিনায়ক। ব্যাটিংয়েও যথেষ্ট আস্থা ও ভরসার প্রতীক। চলতি বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছেন নিউজিল্যান্ড দলনায়ক। টুর্নামেন্টে ৮ ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি ও সমান হাফসেঞ্চুরিতে ইতোমধ্যেই ৫৪৯ রান করেছেন। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ইনিংস উপহার দিয়েছেন। ফাইনালে ইংল্যান্ড বোলারদের দুঃস্বপ্ন উপহার দিতে পারেন উইলিয়ামসন।

টিম নিউজ
নিউজিল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলস সেমিফাইনালে ব্যাটিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়লেও সেটি গুরুতর নয়। ফাইনালে তার খেলা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। নিউজিল্যান্ড উইনিং কম্বিনেশন নিয়েই মাঠে নামতে পারবে তাতে।

অন্যদিকে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গ্রোয়েন ইনজুরিতে পড়েন জনি বেয়ারস্টো। ফিটনেস টেস্টে তাকে নিয়ে ইতিবাচক রিপোর্টই পাওয়া গেছে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাবে ইংল্যান্ডও।

টস ফ্যাক্ট
বিশ্বকাপের ফাইনালে টস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে টসে জিতলে দুই অধিনায়কই শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নিয়েই রেখেছেন!

বিশ্বকাপে আগের ১১ ফাইনালের সাতবারই আগে ব্যাটিং করা দল জয় পেয়েছে। যদিও শেষ দুই বিশ্বকাপে রানতাড়া করা দলের জয় এসেছে। ২০১১ সালে মুম্বাইয়ে ভারত এবং ২০১৫ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া সেটা করেছে। তবে চলতি আসর কথা বলছে আগে ব্যাটিং করাদের দিকে জয়ের পাল্লা হেলে যাওয়ার বিষয়ে।

চাপ ফ্যাক্ট
একদিকে বিশ্বকাপের হটফেভারিট ইংল্যান্ড, অন্যদিকে টুর্নামেন্টের নরম-সরম নিউজিল্যান্ড। ফাইনালের লড়াইয়ে ফেভারিট-তত্ত্ব যে কোনো কাজে দেবে না সেটি জানে দুদলই। জিতলেই ইতিহাস- এমন ম্যাচে অনুপ্রেরণার পাশাপাশি চাপও অনুভব করছেন উইলিয়ামসন-মরগানরা। লর্ডসে তাই ব্যাট-বলের লড়াইয়ে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইও নির্ণায়ক হয়ে উঠবে। স্নায়ুর চাপ সামলে যারা নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতে পারবেন, বিজয়মাল্য তাদের গলায়ই উঠবে। অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।

সম্ভাব্য একাদশ
ইংল্যান্ড: জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, ইয়ন মরগান, বেন স্টোকস, জস বাটলার, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, মার্ক উড, জফরা আর্চার ও লিয়াম প্লাঙ্কেট।

নিউজিল্যান্ড: হেনরি নিকোলস, মার্টিন গাপটিল, কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর, টম ল্যাথাম, জেমস নিশান, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, লোকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরি।