রাজধানীর তেজগাঁও থেকে রাতে মাইক্রোবাসে করে তুলে নেওয়ার পর আইটি বিশেষজ্ঞ আতাউর রহমান শাহীন ২ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমার অনাগত সন্তান ও নয় বছরের সন্তানের বাবাকে ফিরিয়ে দিন।”
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান স্ত্রী তানিয়া আক্তার।
গত ২ মে রাত সাড়ে সাতটার দিকে আতাউরকে একটি মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে যায়।
তানিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী ২ মাস ধরে নিখোঁজ। আমি সন্তানসম্ভবা, অসুস্থ। স্বামীর জন্য দুই মাস বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। স্পিকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাব, ডিবির কাছে গিয়েছি। সবাই শুধু বলে, দেখছি। ৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো? আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন, আমার অনাগত সন্তান ও ৯ বছরের সন্তানের বাবাকে ফিরিয়ে দিন।
ঘটনার দিনের বর্ননায় তিনি জানান, সেদিন রাতে শাহীন বাসায় না ফেরায় রাতেই তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার মোবাইলে ফোন দেন। তবে তার মোবাইলফোনটি বন্ধ পান। এরপর তিনি বিষয়টি তার স্বজন ও সহকর্মীদের জানান। তারা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেন। এমনকি হাসপাতালেও রাতে খোঁজ করেন। তবে কোথাও তার সন্ধান পাচ্ছিলেন না।
এরপর ৩ মে সকালে শাহীনের স্বজনরা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় যান। শাহীনের মামা সাইফুল ইসলাম একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ১২৩) করেন। ঘটনার পর পুলিশ আকিজ হাউজে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। তারা মাইক্রোবাসটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে। এরপরও খোঁজ না পেয়ে মামলা করে পরিবার।
২ মাস পরেও স্বামীর খোজ না পাওয়া তানিয়া বলেন, আমার স্বামী বেঙ্গল গ্লাস কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও ৪ বছর ধরে সে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি করতো। স্বামীকে না পেয়ে আমি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকারসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউই তার নিখোঁজের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর কোন শত্রু ছিল না, অফিসে কারও সাথে সমস্যা ছিল না, রাজনীতিও করতো না। যারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে তাদের চেহারা সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে, তারপরেও কেন তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না? আমি নিশ্চিত সরকার ভালভাবে তদন্ত করলে আমরা তাকে ফিরে পাবো। তাই আমি তাকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে আতাউরের বাবা আব্দুল আউয়াল মন্ডল বলেন, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আমি র্যাবের কাছে যাই। প্রথমে তারা তৎপর ছিল, পরে থেমে গেছে। ডিবিও প্রথমে তৎপর থেকে পরে থেমে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘দেখছি’।
বাবাকে ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলনে আতাউরের ছেলে তাসদিদ আন নাফি জানায়, বাবা সেদিন দুপুরে আমাকে ফোন দিয়েছিল। বলেছে সন্ধায় ফিরবে। আর ফেরেনি। আমি আমার বাবাকে খুব মিস করি। বাবাকে তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
গত ২ মে রাত সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার আকিজ হাউজ অফিসের সামনের ফুটপাত থেকে তিন ব্যক্তি জোর করে আতাউর রহমান শাহীনকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা শাহীনের অফিসের সামনে সিসিটিভি’র ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, বৃহস্পতিবার (২ মে) রাত ৭টা ২২ মিনিটে শাহীন তার সহকর্মী ফারুককে নিয়ে অফিস থেকে বের হন। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তারা দুজনই মোটর রাইড শেয়ারিং কোম্পানির অ্যাপসে রিকোয়েস্ট দেন।
সিসিটিভি’র ফুটেজে আরও দেখা যায়, শাহীনের সহকর্মী ফারুকের রাইডার আগে চলে আসলে তিনি চলে যান এবং শাহীন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেসময় ফুটপাতের সামনে একটা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। শাহীন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখছিলেন। এসময় তিনজন লোক এসে তার পেছনে দাঁড়ায়, আর মাইক্রোবাসটি আস্তে আস্তে তার সামনে চলে আসে। তখনও মোবাইল দেখছিলেন শাহীন। কিছু খেয়াল করেননি। মাইক্রোবাসটির ভেতর থেকে একজন দরজা খোলে এবং শাহীনের পেছনে দাঁড়ানো তিনজন তাকে ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।