ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর সহপাঠি বান্ধবীদের উদ্দেশে নুসরাত জাহান রাফির লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নুসরাতের বাড়ি থেকে এ চিঠি উদ্ধার করেছে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ। চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি কয়েকদিন আগের লেখা বলে মনে করছে তদন্তকারী সূত্র।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান: তার পড়ার টেবিলে খাতায় দুই পাতার ওই চিঠি তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে সম্বোধন করে লেখা হয়েছে।
গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছে নুসরাত। ওই চিঠিতে নুসরাত আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করে। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজ উদদৌলা গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করে নুসরাত।
তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটুক্তিতেও তার মর্মাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে নুসরাত জাহান রাফি লিখেছে, ‘‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ? তোরা সিরাজ উদদৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস। তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরো কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে- নুসরাত ডং করিস না। তুই প্রেম করিস না। ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে। ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেবো। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে।
বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে। আমি লড়বো শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’’
গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফিকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার পর থেকে কেউ কেউ ঘটনাটিকে আত্মহত্যার চেষ্টা বলেও ধারণা করেছেন। তবে উদ্ধার হওয়া চিঠিটিতে নুসরাতের ভাষ্য ভিন্ন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন: এটিও ওই ঘটনার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখিতদের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।