‘বিবিসি’ বনাম ‘বিবিসি’। রিয়াল মাদ্রিদ বনাম জুভেন্টাস। বেল-বেনজেমা-ক্রিস্টিয়ানো বনাম বোনুচ্চি-বারজাল্লি-কিয়েল্লিনি। ফরোয়ার্ড বনাম ডিফেন্ডার। শনিবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ভাগ্য গড়ে দেবে এই ‘বনাম’দের মধ্যের কেউই। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪৫মিনিটে ফুটবল রোমাঞ্চের সবটুকু পসরা নিয়ে বসছে সেই লড়াই।
রিয়ালের বিবিসি’র সঙ্গে মিলে ইসকো-মোরাতারাও দারুণ সব আক্রমণ গড়তে জানেন। তবে ফুরফুরে মেজাজে থাকতে পারছেন না কোচ জিনেদিন জিদান। ফাইনালে তার দল এমন এক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যারা মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের থামিয়ে দিয়েছিল কোন গোল করতে না দিয়েই। কার্ডিফের মাঠে জিদান শিষ্যদের লড়াইটা যে বর্তমানে ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষণের দল জুভেন্টাসের বিপক্ষে!
তবে ইতিহাস রিয়ালের পক্ষেই। অতীত ইতিহাস বলে ইউরোপীয় সেরার লড়াইয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে জুভেন্টাসের বিপক্ষে ২ বার মুখোমুখি হয়ে প্রতিবারই জিতেছে লস ব্লাঙ্কোসরাই। এমনিতে ১৮ বার একে অপরের বিপক্ষে লড়েছে দুই দল। দুটি ম্যাচ ড্র তাতে, বাকী ১৬ লড়াইয়ে ৮ বার করে জিতে সমতায় আছে রিয়াল-জুভেন্টাস।
সব মিলিয়ে কার্ডিফের মাঠে রোনালদোদের কঠিন পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত বুফনরা। কিয়েল্লিনি-বোনুচ্চি-বারজাল্লি ত্রয়ীদের ভেদ করে এবারের আসরে আক্রমণ শানাতে পারেনি অনেক ক্লাবই। কোয়ার্টার-সেমিতে বুফনকে ফাঁকি দিয়ে জুভদের জালে বল গেছে মাত্র একবার। আবার কোয়ার্টার-সেমিফাইনাল মিলিয়ে ১০ গোল করা রোনালদো নিশ্চয় বসে থাকবেন না। আর একটি গোল করলেই যে এবারের আসরের সর্বোচ্চ ১১টি গোল করা মেসির সমান স্কোরার হতে পারবেন সিআর সেভেন।
একটি গোল চাই রিয়ালেরও। এই প্রতিযোগিতায় ৪৯৯টি গোল করেছে বার্নাব্যুর দলটি। ফাইনালে গোল করলেই প্রথম দল হিসেবে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ৫০০তম গোলের মাইলফলকে পৌঁছাবে তারা। এ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে বেশি ৩২টি গোল করা দল রিয়াল।
তবে এই মৌসুমে ফরোয়ার্ডদের কাছে যেভাবে চীনের প্রাচীর হয়ে উঠেছেন জিয়ানলুইজি বুফন। এই ৩৯ বছর বয়সী ‘তরুণ’ গোলরক্ষকই হতে পারেন প্রধান বাধা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে ১১ ম্যাচে ৮টিতেই গোল খাননি বুফন! জুভেন্টাসের জালেই এ পর্যন্ত গোল ঢুকেছে মাত্র ৩টি। তার কাজটা সহজ করবেন ডিফেন্ডাররা। আর আলভেজ-দিবালা তো আছেনই প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস হতে।
রিয়ালের জ্বালা আরো বাড়াতে প্রস্তুত স্যামি খেদিরা এবং গঞ্জালো হিগুয়েন। সাবেক দুই গ্যালাটিকোস খেলোয়াড় প্রস্তুত বার্নাব্যুতে পাওয়া সমস্ত বঞ্চনার জবাব দিতে। বেনজেমার সঙ্গে নয় নম্বর জার্সি দখলের লড়াইয়ে পেরে না উঠে রিয়াল ছেড়েছিলেন হিগুয়েন। আর সাবেক লস ব্লাঙ্কোস কোচ মরিনহোর প্রিয় শিষ্য খেদিরা কার্লো আনচেলত্তির আমলে হয়ে পড়েছিলেন ব্রাত্য। দুই মৌসুম আগে এই জার্মান মিডফিল্ডার ঠাই খুঁজে নেন তুরিনের ক্লাবটিতে।
রিয়াল বস জিদান অবশ্য দাবি করতেই পারেন এত হিসাব-নিকাশ দিয়ে তো শিরোপা জেতা যায় না! দলকে কীভাবে কাপ জেতাতে হয় সেই সমীকরণ এই ফরাসী কোচের চেয়ে আর কে ভালো জানে। গত মৌসুমে এক বিশৃঙ্খল দলকে গুছিয়ে এনে দিয়েছেন একাদশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। এবারতো একমাত্র কোচ হিসেবে টানা দুই শিরোপার দ্বারপ্রান্তে তিনি। ২০১২ সালের পর লা লিগা শিরোপাও জিতিয়েছেন মাদ্রিদের দলটিকে।
জিদানের জন্য আরো উপলক্ষ্য থাকছে। রিয়ালের সর্বশেষ তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সঙ্গেই কোন না কোনোভাবে জড়িয়ে তিনি। শিরোপার নবমটা ২০০১-০২ জিতেছিলেন দলটির খেলোয়াড় হিসেবে, পরে সহকারী কোচ হিসেবে ২০১৩-১৪ মৌসুমে দশমটা, আর গত বছর একাদশতম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিটা জিতেছেন কোচ হিসেবে। আবার মুখোমুখি হচ্ছে সাবেক ক্লাব জুভেন্টাসের! ২০০১ সালে রিয়ালে যোগ দেওয়ার আগে টানা পাঁচ বছর জুভদের জার্সিতেই মাঠ মাতিয়েছেন জিদান।
এবার টানা ষষ্ঠবারের মতো সিরি আ, আর টানা তৃতীয়বারের মতো ইতালিয়ান কাপ জিতে ‘ট্রেবল’র পথে আছে জুভেন্টাস। শেষ হাসিতে ভাসতে পারলে ইউরোপের নবম দল হিসেবে ‘ট্রেবল’ জয়ের কীর্তি গড়বে তারা। সেখানে ‘ডাবল’র অপেক্ষায় রিয়াল। জিদানের অধীনে পাঁচ বছর পর লা লিগার শিরোপা জিতেছে তারা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলে ৫৯ বছর পর ইউরোপিয়ান ‘ডাবল’ হবে ইউরোপের সফলতম ক্লাবটির। উপলক্ষ্যের তাই যেন শেষ নেই। এখন অপেক্ষা মাঠের রোমাঞ্চের।