লংগদুর সাম্প্রতিক ঘটনায় ফেসবুকে এক পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন লিখেছেন, সরকারের পর সরকার পরিবর্তন হলেও পাহাড়ে আগুন জ্বলাটাই বাস্তবতা। তার শৈশবে দেখা পার্বত্য চট্টগ্রাম আর এখনকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়ার আমল থেকে অনেক সরকার পরিবর্তন হলেও সেখানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।
নীচে তার পোস্টটি পুরোটা দেয়া হলো:
‘তখন জিলার নাম ছিলো পার্বত্য চট্টগ্রাম- রাঙ্গামাটি, বান্দরবান আর খাগড়াছড়ি নিয়ে। বাবা পার্বত্য চট্টগ্রাম জিলা সমবায় কর্মকর্তা। আমরা থাকি রাঙ্গামাটি শহরে। খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে সেনাবাহিনীর শারীরিক প্রশিক্ষণের দৌঁড়ের সমবেত ঠুক-ঠাক আওয়াজে। রাতে মাঝে মাঝেই চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ। পাহাড়ে আগুন দেখে জানতাম, সরকার বিভিন্ন জেলা থেকে নিঃস্ব মানুষদের সেখানে বসতি গড়ে দেবার জন্য উচ্ছেদ করছে পাহাড়ের মানুষদের। তখন জিয়াউর রহমানের কাল।
বাবা প্রায়ই লংগদুতে যেতেন অফিসের ট্যুরে। সেই থেকে লংগদু নামের সাথে পরিচয়। আশৈশব স্মৃতি। বাবা এসে বলতেন নিজভূমে পরবাসী মানুষের কথা। বিশেষ করে বলতেন, বাবার সাথে যে চাকমা-মারমা অফিসার যেতেন, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে গেলে যখন তাদের তল্লাশি করা হতো, তখন বাবা সেদিকে তাকাতে পারতেন না। লজ্জায় মাথা নীচু করে থাকতেন। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে কিছু বলতেও পারতেন না। সন্তানদের কাছে সেই বেদনা প্রবাহিত করতেন।
আজ লংগদুতে আগুন। জানি, বলে কিছুই হবে না। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই আমরা নিজেদের স্বস্তির জন্য। কিন্তু আমার স্মৃতিতে বাবা সন্ধ্যার পরে তার ইজি চেয়ারে আধশোয়া হয়ে আছেন। এইসব কথা বলছেন মৃদু স্বরে। সেই বেদনা, তার সেই শিশু মেয়েটার বুকে সেদিন যেমন বিঁধেছিল আজ মধ্য বয়সেও একই বেদনায় বাজছে।
সেদিন বাবা কিছু করতে পারেননি। আজ তার মেয়েও জানে কিছুই করতে না পারার অসহায়ত্ব। জিয়ার আমলের পরে এরশাদ আমল, তত্ত্বাবধায়ক আমল, খালেদা জিয়ার আমল, শেখ হাসিনার আমল। এসব সরকারে সরকারে না কি কত পার্থক্য। কিন্তু পাহাড়ের মানুষের কাছে, আগুন জ্বলছে, এটাই সত্য।’