প্রক্সি সহায়তা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় পৃথক তিনটি ইউনিটে মেধাক্রমে ২ম, ৩য়, ৫ম ও ১৭৭ তম হয়েছেন চার পরীক্ষার্থী।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের মৌখিক সাক্ষাৎকার চলাকালে তাদের এই প্রাক্সির বিষয়টি ধরা পড়ে। এর মধ্যে তিনজনকে আটক করা হলেও একজন পালিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে ইনস্টিটিউট অব ইনফরশেন টেকনোলজি (আইআইটি)। পরে সন্ধ্যা ৫ টার দিকে তাদেরকে আশুলিয়া থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জানা গেছে, কলা ও মানবিকী অনুষদের (সি ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষায় রাকিবুল ইসলাম (রোল:৩৩১১০৯) ২য় ও তপু সাহা (রোল:৩১৪৮৭১) ৩য় স্থান অধিকার করেন।
আর বিজনেস স্টাডিজ অনুষদেও ভর্তি পরীক্ষায় (ই ইউনিট) রকিবুল হাসান (রোল:৫১০৯৩৬) ১৭৭ তম হন। আজ সোমবার তাদেরকে সংশ্লিষ্ট অনুষদগুলোর ডীন অফিসে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলে ওই তিন পরীক্ষার্থীর কারোরই তাদের উত্তরপত্রের স্বাক্ষর ও হাতের লেখার সাথে আজকের হাতের লেখা যাচাই করলে গরমিল দেখা যায়। এমনকি উত্তরপত্রে লেখা মোবাইল নাম্বারও কেউ বলতে পারেননি। এতে শিক্ষকদের সন্দেহ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে প্রক্সির সহায়তা নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, পরীক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তরপত্রে বাংলা ও ইংরেজিতে দুটি পৃথক বাক্য লিখতে হয়। কোন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সাক্ষাৎকারের সময় উত্তরপত্রের হাতের লেখা যাচাই-বাছাই করেন শিক্ষকরা।
এর মধ্যে তপু সাহা টাঙ্গাইলের যুবক রাজুর মাধ্যমে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রক্সি সহায়তা নিয়েছেন। বিষয়টি তার বাবা রনজিৎ কুমার সাহাও স্বীকার করেছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের বাজিতপুরে। এছাড়া, রাকিবুল ইসলাম এর বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম এবং মো. রকিবুল হাসান কুমিল্লার বুড়িচং এ ।
এ বিষয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডীন মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রের সাথে রাকিবুল ও তপুর কথাবার্তার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে ভর্তির অযোগ্য ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা শাখার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাকি সিদ্ধান্ত নেবে।’
এদিকে, গতকাল রবিবার ‘এইচ ইউনিট’ আইআইটির ভর্তি পরীক্ষায় ৫ম হওয়া মো. হাসনাত হাসান শরিয়া প্রাচুর্য (রোল:৮২১৩৭২) সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে আসলে তিনিও একই অভিযোগে সন্দেহভাজন হন। এছাড়া উত্তরপত্রে দেওয়া ফোন নাম্বারও বন্ধ পান শিক্ষকরা। পরে ওই পরিক্ষার্থী শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ করলে তাকে আজকে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আজ সে এক ঘন্টার একটি একক লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। সেখানে সন্তোশজনক ফল দেখাতে না পারায় ভর্তির জন্য সাময়িক অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় আইআইটি বিভাগ কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধানের জন্য তার এ ফলাফল কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই পরীক্ষার্থী পালিয়ে গেছে বলে দাবি করেন আইআইটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আক্কাছ আলী।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে রেখে অফিসের ভেতরের কক্ষে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে সে পালিয়ে যায়।’