কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’। প্রতি বছর টেলিভিশন দর্শকদের ঈদ আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করে এ অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানটি ধারণের জন্য শাইখ সিরাজ ছুটে বেড়ান গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। পদ্মা, যমুনার চর তো বটেই, কৃষকের ঈদ আনন্দ ধারণের জন্য তিনি উড়ে গেছেন হাজারো মাইল দূরের দেশ উগান্ডায়।
এবার ঈদ উল আজহা উপলক্ষে কৃষকের ঈদ আনন্দের শুটিং হয় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার ঔটি গ্রামে।
কংশ নদীর পারে শুটিং উপলক্ষে আশপাশের কয়েকটা ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ জমায়েত হয়। তাদের একজন সামছুল হক, সঙ্গে মামুন। সম্পর্কে তারা নানা-নাতী। সামছুল হকের বয়স ৬০ বছর, নাতী মামুনের ১৫। ঔটি গ্রামের পাশের গ্রামেই তাদের বসবাস। লোক মারফত জানতে পারেন শাইখ সিরাজের শুটিংয়ের কথা। টিভিতে দেখা প্রিয় অনুষ্ঠানের শুটিং দেখার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে কে চায়? নাতীকে ঘোড়ার পিঠে তুলে টগবগ টগবগ করতে করতে তাই চলে এলেন কংশ পাড়ে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে সামছুল হক বলেন: গত ঈদেও টিভিতে নানা-নাতী বসে কৃষকের ঈদ আনন্দ দেখেছি। সেই অনুষ্ঠান সামনে থেকে দেখতে পারব ভাবনায় ছিল না। যখনই শুনলাম শুটিংয়ের কথা, সেই নাতীকে নিয়ে ছুটে এলাম। শাইখ সিরাজ স্যারকে দেখে খুব ভালো লেগেছে। তিনি এত সহজে কৃষকদের সাথে কিভাবে মিশে যান তাই ভাবছি বারবার।
নাতী মামুন বলে: বালিশ খেলা আর কলাগাছ বেয়ে ওঠার খেলা ভালো লেগেছে। বৌদের টাকিমাছ ধরার খেলাটাও ভালো লেগেছে। সামনে বসে শুটিং দেখলাম। খেলা দেখলাম। আবার যেদিন টিভিতে প্রচার হবে সেদিন টিভিতেও দেখবো।
ঘোড়া নিয়ে আসা প্রসঙ্গে সামছুল হক জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই ঘোড়া ভালোবাসেন। ঘোড়া দাবড়িয়ে অনেক পুরস্কারও জিতেছেন। যেখানে যান ঘোড়া নিয়ে যান।
এবারের আয়োজনের জন্য ময়মনসিংহকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে শাইখ সিরাজ বলেন: প্রতি বছর কৃষকের ঈদ আনন্দের একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে। এবার কৃষি ঐতিহ্যের কীর্তিময়ী নারী জ্যোতিষী খনাকে থিম করা হয়েছে। সব দিক থেকে ময়মনসিংহকেই এবার আয়োজনের উপযোগী মনে হয়েছে।
তিনি বলেন: পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্রের তীরবর্তী ময়মনসিংহের মানুষের অর্থনীতির মূলভিত্তি কৃষি। প্রাচীণকাল থেকেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই অঞ্চল। ধান, পাট, সরিষা, বেগুনের পাশাপাশি মাছ চাষেও বিপ্লব এনেছে এখানকার কৃষক। এই জেলার কলসিন্দুরের মেয়েরা সাহস আর দৃঢ় মনোবল দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে বিশ্ব প্রাঙ্গণে। এছাড়া এই ময়মনসিংহেই রয়েছে ময়মনসিংহ গীতিকার অমর কীর্তি। কবি চন্দ্রাবতীর জন্মস্থানও এখানে।
শাকুয়াই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাজিমুদ্দিন আহমদ জানান, তাদের অনেক প্রিয় একটি অনুষ্ঠান কৃষকের ঈদ আনন্দ। প্রতি ঈদে পরিবারের সাথে অনুষ্ঠানটা টিভিতে দেখেন।
‘শাইখ সিরাজ এই এলাকার মানুষের কাছে কতটা জনপ্রিয়, তার প্রমাণ তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের জমায়েত হয়েছেন। আজ আমাদের হালুয়াঘাট ধন্য,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ অনুষ্ঠানটি ঈদুল আজহার পরদিন বিকেল সাড়ে চারটায় প্রচার হবে চ্যানেল আইয়ে।
ছবি: মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ