বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্ন চাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল উত্তাল হওয়ার পাশাপাশি পূর্ণিমার জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজার সৈকতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সৈকতের তীর থেকে ঝাউ বাগান পর্যন্ত সবকিছু ভাঙনের মুখে পড়েছে। সাগরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে নিচু এলাকা।
পর্যটকদের মূল আকর্ষণ লাবনী পয়েন্ট তীব্র আকার ধারণ করেছে ভাঙন। বলবৎ রয়েছে ৩ নাম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। এতে পর্যটনে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন বিভাগ বলছে যেখানেই ঝাউবাগান ভেঙ্গে যাবে সেখানে ঝাউগাছ লাগানো হবে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুছাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার হওয়ার সময় পূর্ণিমার জোয়ার থাকাই সাগর প্রচন্ড উত্তোল হওয়ার পাশাপাশি জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দু থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজারের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত তিনদিন ধরে কক্সবাজারের উপর দিয়ে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ্য অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে মাঝে মধ্যে ধমকা উজাড় হওয়া বয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়; উচ্চ জোয়ারের আঘাতে ঝুঁকির মুখে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা। একদিকে ভাঙনের কারণে যেকোন মুহুর্তে ভেঙে পড়তে পারে স্থাপনাটি। যার জন্য জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে সৈকতের অন্যতম পয়েন্ট লাবণী জোয়ারের পানিতে ভেঙে তছনছ। পানি কমলে ভেসে উঠছে ভাঙনের চিত্র। শুধু সৈকতের লাবনী পয়েন্ট নয়; মাদ্রাসা পয়েণ্ট থেকে শুরু করে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত উচ্চ জোয়ারে ভাঙছে বালিয়াড়ি। যার কারণে সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ছে সৈকত।
সৈকতে নামতে গিয়ে অনেক সময় আহত হচ্ছেন পর্যটকরা। কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে আসা পর্যটক আব্দুস সালাম বলেন, চোখের সামনে লাবনী পয়েন্টে ভেঙে যাচ্ছে। সাগরের ভাঙন দেখে আমাদেরও ভয় লাগছে।
ভাঙনের সময় ও সৈকতে বিপুল পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে পর্যটকরা সৈকতে ঘুরছে।
সৈকতের তীব্র ভাঙন বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে বলে জানালেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজওনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মো. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, পর্যটকদের সমস্যাগুলো আমরা সবসময় কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করি। সৈকতে ভাঙনের ফলে যে পর্যটকদের সমস্যা হচ্ছে সেটি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সারোয়ার আলম বলেন, অতিবৃষ্টি আর সাগরের ভাঙনের কবলে পড়ে যেসব ঝাউ গাছ ভেঙে গেছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যেসব স্থানে ঝাউগাছ ভেঙে গিয়ে আবার লাগানোর মত পরিবেশ আছে সেখানে পুনরায় ঝাউগাছ লাগানো হবে। ঝাউগাছ লাগানোর প্রক্রিয়াটি সারা বছরই অব্যাহত থাকে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, সাগরের ভাঙন রোধ করার জন্য আমরা জিও ব্যাগ এর ব্যবস্থা করেছি। নাজিরার টেক পয়েন্ট থেকে কাজ শুরু হয়েছে । আবহাওয়া খারাপ থাকার পাশাপাশি সাগরের ভাঙন তীব্র হওয়ায় আমরা আপাতত বন্ধ রেখেছি। তবে এখানে একটি টেকসই বা নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে যেটি খুব দ্রুত মন্ত্রী পরিষদে পাস হবে বলে আমরা আশা করছি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে সাগরের পানি দুই থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে দেওয়া তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে আরো কয়েকদিন। গত ২৪ ঘণ্টায় স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।