‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ শুরু হচ্ছে চার দিন পর। আনন্দের পাশাপাশি মেলাকে কেন্দ্র করে এ বছর চিন্তার ভাঁজ পড়েছে লেখক, প্রকাশকদের কপালে। কারণ, বই তৈরির প্রধান উপাদান কাগজের দাম এখন আকাশছোঁয়া। কাগজের নানা পদের মধ্যে টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম। পাইকারিতে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকাশকরা বলছেন, দুই বছরের ব্যবধানে বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ।
বইমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি দেখতে মেলা প্রঙ্গণ ঘুরে দেখা যাচ্ছে- লেখক, প্রকাশক, পাঠকসহ সারাদেশের মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুণছে, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। সারিতে সারিতে সাজানো হচ্ছে বইয়ের স্টল। প্রকাশনা সংস্থা ও প্রকাশকদের বেড়েছে ব্যস্ততা। কাগজের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বইয়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা। যার ফলে তৈরি হয়েছে শঙ্কা, বেশি দামে বই কিনতে আগ্রহ রাখবেন তো পাঠকরা!
গ্রন্থমেলায় পাঠকদের সাথে আড্ডা দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন লেখক সমাজ। তবে রয়েছে কপালে চিন্তার ভাঁজ। বৈশ্বিক মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতায় বিশ্বব্যাপী নিত্যপণ্যসহ সকল ধরণের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে বইয়ের মূল্যও। আর তাই লেখক এবং প্রকাশকরা চিন্তিত ঠিক কতটা প্রভাব পড়বে বইমেলায়।
এ বিষয়ে চিন্তিত হলেও আশার স্বপ্ন দেখছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তরুণ লেখক রাব্বি হোসেন। রাব্বি বলছেন, বই হচ্ছে ভালোবাসার জায়গা। মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা প্রভাব পড়লেও, মানুষ তা গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে পাঠকরা ভালো বইগুলো বাছাই করে নিবেন। আগের ন্যায় যেকোন ধরনের বই কিনে টাকা নষ্ট না করে ভালো বইগুলো বাছাই করে নেবেন।
পাঠকদের একটা অংশ তরুণ, তারা ভালোবাসতে জানে। ভালোবাসা মূল্যায়ণ করতে জানে, আর তাই ভালো বই সংগ্রহ করে লেখকদের পাশে থাকবে এবং প্রকাশনা শিল্পকে টিকিয়ে রাখবে এমনটা প্রত্যাশা ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মিরাজ আহম্মেদের।
দেশের মানুষ রুচিশীল, তারা ভালো কাগজ এবং মেটেরিয়াল প্রত্যাশা করে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির রমনা থানা সাধারণ সম্পাদক মঈন মোরসালিন বলেন, ‘আমি কলকাতা বইমেলা থেকে ঘুরে আসছি। তারা আমাদের দেশের বইয়ের বাঁধন দেখে মুগ্ধ। কলকাতার পাঠকরা বলেছিলেন যে বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা খুব সুন্দর। টাকা বেশি হলেও তারা ভালো জিনিসটাই নেবে।’
মোরসালিন মনে করছেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেললেও বাধা হয়ে থাকবে না। তিনি আশা করছেন, গত দু’বছর করোনা প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া শিল্পটা এবার কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে।
কাগজের দামসহ প্রয়োজনীয় উপাদানের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকশকদের বই কমিয়ে চাপানোসহ কিছু কৌশল হাতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ এর সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমি পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, যেহেতু কাগজের দাম বেশি, প্রকাশকরা বইমেলাকেন্দ্রিক বই কমিয়ে চাপাতে পারেন। পরবর্তীতে দাম কমে এলে আবার চাপাতে পারেন, এতে আপনার খরচ কমবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, কাগজ ছাড়াও আনুসাঙ্গিক উপাদানেও খরচ কমাতে পারে প্রকাশকরা। সর্বোপরি কাগজের দাম বৃদ্ধিতে গ্রন্থমেলায় প্রভাব থাকবে না বলে বিশ্বাস করেন এ কর্মকর্তা।