নেপালে গত বছর মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন আনুচিং মগিনি। অবাক করে গত রোববার নিজের ফেসবুক পেজে অবসরের কথা জানিয়ে ১৯ বর্ষী স্ট্রাইকার লেখেন, আজকের পর থেকে ফুটবলকে বিদায়।
বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। পরেরদিন ফেসবুক পোস্টে অবসরের ঘোষণা দেন সাফজয়ী দলের আরেকজন, ২০ বর্ষী ফরোয়ার্ড সাজেদা খাতুন। তিনি লেখেন, বিদায় একদিন সবাইকেই নিতে হবে ফুটবল ক্যারিয়ার থেকে। আজকের পর থেকে ফুটবল ক্যারিয়ারকে বিদায় দিলাম। নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। সবার কাছে দোয়া কামনা করি।
দুই ফুটবলারের এমন অবসর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। চ্যানেল আই অনলাইনকে বললেন, ‘অবসরে যাওয়ার তো কোনো কারণ দেখি না। অবসরে যাবে কেন? আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল অবসরে কেন যাবে?’
‘তারা এতদিন জাতীয় দলে খেলেছে, পারফর্ম করেছে। অনেককিছুই তারা দলকে দিয়েছে, অনেককিছুই পেয়েছে। পরিবারকেও তারা সাহায্য করেছে। আগে অনেকেই বাদ পড়েছে। তারা তো খেলছে। অনেকে বাদ পড়ে ফিরেও এসেছে। অবসর কেন নেবে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
ক্যাম্প হতে বাদ পড়ার হতাশায় দুই ফুটবলার অবসর নিয়ে ফেললেন কিনা- এমন প্রশ্নে ছোটনের জবাব, ‘এটা কোনো পেশাদারিত্বের ভেতর পড়ে না। আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনি অন্যকোথাও যাবেন, আপনার জায়গায় অন্যকেউ আসবে, এমন অহরহই হচ্ছে।’
পারফরম্যান্স বিবেচনায় গত শনিবার নারী ফুটবল ক্যাম্প থেকে চারজনকে বাদ দেয়া হয়। আনুচিং ও সাজেদার সঙ্গে বাদ পড়াদের মধ্যে আছেন লিমা ও নবিরন। তবে ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লিমা ও নবিরনকে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
নারী দলের কোচ ছোটন পেশাদারিত্বের বিষয়টি সামনে আনলেও মুদ্রার অপর পিঠে রয়েছে ভিন্ন চিত্র। মেয়েদের ফুটবলে সাফল্য এলেও ভঙ্গুর অবকাঠামোর কারণে খেলোয়াড়রা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন। একমাত্র অপেশাদার নারী লিগ ভরসাস্থল, তা নিয়েও প্রতিবছর থাকে অনিশ্চয়তা।
এদেশে জাতীয় দল আর নারী একাডেমি থেকে বাদ পড়া মানেই ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়া। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুবিধাও নেই। নিজেদের প্রমাণ করে ফিরে আসার সুযোগ কম। বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির অবশ্য সাফ কথা, দলের উন্নতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাতেই আনুচিং-সাজেদারা বাদ পড়েছেন। ভবিষ্যতে ভালো করলে আবারও তাদের ফেরার সুযোগ আছে। যদিও ক্যাম্প থেকে ছিটকে ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কায় পড়া চার ফুটবলারের দুজন এরমধ্যেই অবসরের মতো কঠিন পথ বেছে নিয়েছেন।
প্রতিভাবান নারী ফুটবলারদের নিয়ে বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে ৭০ জনের বেশি সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা নেই। সীমাবদ্ধতার ভেতরেই এগিয়ে চলছে কার্যক্রম। এরমাঝেও পাইপলাইনে বাড়ছে ফুটবলারদের সংখ্যা।
স্কুল পর্যায়ে নিয়মিত হচ্ছে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের আয়োজন। অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়ে হয় প্রায় ৫০ দলের অংশগ্রহণে জেএফএ কাপ। দেশের নারী ফুটবলে ৬৪ জেলায় বাফুফের সহযোগী হিসেবে প্রতিভা অন্বেষণে কর্মসূচি ও টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে ইউনিসেফ। অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের সঙ্গে সংস্থাটি বিশেষভাবে যুক্ত রয়েছে।
এতসংখ্যক প্রতিভাবান ফুটবলারের মাঝে থেকে সেরাদের বেছে নিয়েই ফেডারেশন ক্যাম্প করে। শুরুতে বাধ্যতামূলকভাবে তিনদিন তাদের রাখা হয় ক্যাম্পে। ফিটনেস ও পারফরম্যান্সের পাশাপাশি শৃঙ্খলা ও আচরণগত পরীক্ষার ভেতর দিয়ে সবাইকে যেতে হয়। তারপর যোগ্যতা প্রমাণ করে ক্যাম্পে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ মেলে।
ক্যাম্পে ফুটবলারদের বাছাই প্রক্রিয়ায় নেই কোনো বিতর্ক। যেহেতু ৭০ জনের বেশি থাকার সুযোগ নেই, তাই টিকে থাকার জন্য চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। তবে ক্যাম্প থেকে ঝরে পড়াদের ফিরিয়ে আনতে নেই উদ্যোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের এক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে অকপটে স্বীকার করে নিলেন বাস্তবতাটা।
‘আসলে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর ক্যাম্পে ফিরে আসার সুযোগ তেমন থাকে না। ফিটনেস ধরে রাখা, ট্রেনিং নেয়া, পারফর্ম করা, এগুলো একা একা মেইন্টেন করা কঠিন। ক্যাম্পে থাকলে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, বাড়িতে সেগুলো থাকে না। আমাদের নারী ফুটবলারদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা আরও কঠিন।’