রাজধানীর উত্তরায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দায়ী করছে মেয়েটির পরিবার। পরিবারের দাবি, স্কুলের কোচিংয়ে ভর্তি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের আপত্তিকর আচরণে মানসিক আঘাত পেয়ে আত্মহত্যা করেছে মেয়েটি।
পরিবার বলছে, আত্মহত্যার পরদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বাসায় এসে মেয়েটির বাবার কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরা ৪নং সেক্টরের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ‘ডন বস্ক স্কুল এন্ড কলেজ’র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নূর-ই-সাবা। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত সাবা প্লে গ্রুপ থেকেই ওই স্কুলে লেখাপড়া করে আসছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহী থাকায় আন্তঃ স্কুল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করত সে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে স্কুলে কোচিং চালু করা হয়। যেখানে স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা আরও দুই ঘন্টা কোচিং করবে স্কুলে। নূর-ই-সাবা স্কুলের কোচিং-এ পড়তে না চাওয়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার তার বাবাকে স্কুলে আসতে বলেন। বাবা মো. রবিউল ইসলাম মেয়েকে নিয়ে স্কুলে আসেন এবং তার মেয়ে স্কুলের কোচিং-এ পড়বেনা বলে জানিয়ে দেন প্রিন্সিপালকে।

পরিবারের আরও দাবি, এঘটনায় প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার অসন্তুষ্ট হন এবং নূর-ই-সাবাকে স্কুলের বিভিন্ন ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের সামনে ভৎসনা করেন। গত ২১ মার্চ তারিখ দুপুরে স্কুলের শেষ দুটি পিরিয়ডে ক্লাস শিক্ষক উপস্থিত না থাকায় নূর-ই-সাবা তার কয়েকজন সহপাঠীসহ শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে পাশের পার্কে ঘুরতে যায়। সেখানে বন্ধুরা কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে কেউ বাড়িতে ফেরে, অন্যরা স্কুলের কোচিংয়ের জন্য স্কুলে ফিরে যায়। নূর-ই-সাবাও বাড়িতে ফিরে আসে।
স্কুল থেকে বের হয়ে পার্কে যাবার ঘটনায় প্রধান শিক্ষক তাদেরকে বকাবকি করেন এবং নূর-ই-সাবার বাড়িতে তার মাকে ফোনে জানান। এসময় নূর-ই-সাবা সেখানে উপস্থিত ছিল। এতে নূর-ই-সাবা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং সে অনেক চুপচাপ হয়ে যায়। সেদিনই দুপুরের পর জানালার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করে নূর-ই-সাবা।
মেয়ের মৃত্যুর জন্য নূর-ই-সাবার পিতা রবিউল ইসলাম স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহারকে দায়ী করে থানায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সাবার আত্মহত্যা ও তার বাবার করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সেদিন স্কুল ছুটি হওয়ার আগেই নূর-ই-সাবা সহ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী স্কুল থেকে বের হয়ে পার্কে যাওয়ায় আমি তাদের বকা দিয়েছেন, কারণ তারা ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করেছে। আমি এমনভাবে বকা দেইনি বা এমন কিছু বলিনি যাতে কোন ছাত্রী মনে এতটা আঘাত পায়।
স্কুলের কোচিংয়ে না পড়া ও সেসূত্রে সাবাকে ভৎসনার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নূর-ই-সাবা ক্লাসের সবথেকে মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় আমি চেয়েছিলাম সে স্কুলের কোচিং-এ পড়ুক। স্কুলের সব ছেলেমেয়ে যাতে ক্লাসে আরও ভালো করতে পারে, তারজন্য আমি সবসময় চেষ্টা করি। তবে নূর-ই-সাবা স্কুলের কোচিং-এ ভর্তি না হওয়ায় তার প্রতি আমার কোনো ধরণের ক্ষোভ ছিল না।’
সাবা’র সাথে খারাপ ব্যবহার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বলেন, ‘আমি কখনো তাকে আলাদা করে ভৎসনা করিনি। দুএকবার ক্লাসের কোন ইস্যু বা বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া নিয়ে আমার কাছে আসলে অথবা স্কুলের ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করায় স্কুলের প্রধান হিসেবে তাদেরকে বকা দিয়েছি এবং একই সাথে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’
সেদিনের ঘটনার বিষয়ে নূর-ই-সাবার বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলে তারা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, সেদিন স্কুলের ক্লাস না থাকায় তারা স্কুল থেকে বের হয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়েছিল। এনিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম একটু বকাবকি করেছেন এবং নূর-ই-সাবার আম্মাকেও কল দিয়েছিলেন। তবে এই ঘটনায় সাবা এত আঘাত পাবে বা এমন কিছু করে ফেলবে তারা কেউ সেটা বুঝতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন