নিউইয়র্কে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উদযাপন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন ও গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দাবির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থাকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি তোলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সন্তানের ভ্রুণ থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত যে যন্ত্রণা, যে ভালোবাসা ও পরীক্ষা তা প্রতিটি মা উপলব্ধি করেন। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে বড় হয় পুরোটাই মায়ের মমতা ও যত্নে। মায়ের চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না। এই সত্য প্রত্যেক জাতির সঙ্গেও মিলে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যারা যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে পারেননি। তাদেরকে দিয়ে আমরা সরকার গঠন করিনি।
তিনি ষাটের দশকের দূরদর্শী ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খানের কথা তুলে ধরে বলেন, তিনি জয় বাংলা স্লোগান তুলে গোটা ছাত্রসমাজকে আন্দোলিত করে গোটা জাতির মধ্যে তার প্রভাব ছড়িয়ে দেন। সেই শক্তির রেশ এখনও চলছে। কিন্তু আজকে ভারতের বাঙালিরাও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়।
অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাস নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সম্মানিত অতিথি নিউইয়র্কের মেয়র এরিক এডাম্স উপস্থিত হতে না পারায় তার প্রতিনিধি ডেপুটি কমিশনার দিলিপ চৌহান যোগ দেন। তিনি অভিবাসীদের সুযোগ ও স্বপ্ন পূরণের প্রশ্নে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উদযাপনের ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজনকে দৃষ্টান্তমূলক বলে অভিহিত করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদের হাতে মেয়র এরিক অ্যাডাম্স এর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্মানসূচক ‘রিসাইটেশন’ প্রদান করেন।
দিলিপ চৌহান জানান, এটি মেয়রের পক্ষ থেকে দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা। সেসময় মেয়রের জন্যও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটিজ এর বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ড. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক আজকাল এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ, টাইম টিভি ইউএসএ’র সত্তাধিকারী ও বাংলা পত্রিকা সম্পাদক আবু তাহের, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, নিউইয়র্ক মেয়রের উপদেষ্টা ফাহাদ সোলাইমান, জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শুটার ও অলিম্পিয়ান এস এম ফেরদৌস, চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কাজী আযম, সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন, মূল ধারার রাজনীতিক মামনুনুল হক, অধ্যাপক এম রহমান সুজন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ডা. চৌধুরী সারওয়ার হাসান, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদারসহ নিউইয়র্কে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্ম ও মানবতার বাণী প্রচার করা হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাদিক, বাইবেল থেকে পাঠ করেন রেভারেন্ড জেমস রয় এবং রামায়ণ ও গীতার শ্লোক থেকে আলোচনা করেন রাশেশ্বরী গোল্লাপুরি। আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানসহ জনপ্রিয় সব দেশগান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী রিজিয়া পারভীন ও চন্দন চৌধুরি। আবৃত্তি করেন অভিনয় শিল্পী ও আবৃত্তিকার টনি ডায়েস ও মোস্তফা কামাল। নৃত্য পরিবেশন করেন প্রিয়া ডায়েস।