চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পাগলা হাওয়ার রাতে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস

‘বামবা চ্যানেল আই ব্যান্ড মিউজিক ফেস্ট ২০২২’-পাওয়ার্ড বাই গান বাংলা

হয়ে গেলো ব্যান্ড শিল্পীদের নিয়ে বছরের সবচেয়ে তারকাবহুল কনসার্ট ‘বামবা চ্যানেল আই ব্যান্ড মিউজিক ফেস্ট ২০২২’-পাওয়ার্ড বাই গান বাংলা। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) দিনভর কনসার্টটি দেখতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম।

সর্ব সাধারণের জন্য এদিন আর্মি স্টেডিয়ামের গেট ওপেন হয় দুপুর ১২টায়। যদিও শ্রোতা দর্শক আরও আগে থেকেই উৎসবস্থলে উপস্থিত হন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে মাঠে জমতে থাকে দর্শক। তবে দর্শকের ঢল নামে বিকেল ৪টার পর থেকে। তার আগে ‘বামবা-চ্যানেল আই ব্যান্ড মিউজিক ফেস্ট’ এর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত কিংবদন্তী আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করা হয়।

শুরুতেই কনসার্ট মাতিয়ে রাখেন ভাইকিংস, পেন্টাগন, অবসকিওর, ফিডব্যাক, পাওয়ারসার্জ এর মতো ব্যান্ডগুলো। তাদের গানের সাথে গলা মেলান হাজারও দর্শক। ব্যান্ডগুলোর প্রত্যেকেই আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্ন এবং চ্যানেল আইয়ের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি জানান কৃতজ্ঞতা।

এদিন সন্ধ্যায় উপস্থাপক মারিয়া নূর হঠাৎ ঘোষণা করেন, মঞ্চে আসছে এই সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীন। সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের মধ্যে জোয়ার বইয়ে যায়। যারা একটু অমনযোগী ছিলেন, এমন ঘোষণায় মঞ্চের দিকে ছুটে আসেন শ্রোতা দর্শক।

ছবি: মিতুল আহমেদ

মঞ্চে উঠেই ‘বন্ধ জানালা’ দিয়ে  নিজেদের পরিবেশনা শুরু করে দলটি। একা পাখি, বোহিমিয়ান, এই অবেলায় ও হাসিমুখ -এর মতো তুমুল শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করে শিরোনামহীন। মঞ্চ ত্যাগ করার আগে দলটির প্রধান ও বেজ গিটারিস্ট জিয়াউর রহমান জিয়া স্মরণ করেন প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুকে। সেইসঙ্গে চ্যানেল আইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, এমন আয়োজন বিগত ৯ বছর ধরে অব্যাহত রাখার জন্য। বামবাকেও ধন্যবাদ জানান, আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্নের সাথে নিজেদের যুক্ত করায়।

শিরোনামহীনের পর ‘মাকসুদ ও ঢাকা’র পরিবেশনাও শ্রোতাদর্শকদের উজ্জীবীত করে। দলটির ‘সারা বাংলায় খবর রটিয়ে দে, ‘নারায়ে তাকবীর’, ‘মেলায় যাইরে’-গানগুলোর সাথে গলা মেলাতে দেখা যায় স্টেডিয়াম ভর্তি তারুণ্যকে। এরপর একে একে রেঁনেসা, দলছুট, ক্রেপ্টিক ফেইট ও অর্থহীন তাদের সেরা গানগুলো দিয়ে মঞ্চ মাত করেন।

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে ৯টা! উপস্থাপক ঘোষণা করেন, এবার মঞ্চ মাতাতে আসছে নগর বাউল! উচ্ছ্বাস আর আনন্দে মেতে উঠে শ্রোতাদর্শক। ‘গুরু’ ‘গুরু’- বলে স্লোগান উঠে পুরো মাঠে। মঞ্চে পা রাখেন নগরবাউল জেমস। তারকাবহুল কনসার্ট, তবুও যেনো মধ্যমণি তিনি। মঞ্চে এসে স্থির হওয়ার আগেই তার হাতে তুলে দেয়া হলো গিটার। কাঁধে নিয়ে গিটারের তারে আঙুল ছোঁয়ালেন! চারদিকে তখন যথারীতি হইহই রব।

প্রথমেই গাইলেন ‘তারায় তারায় রটিয়ে দেবো’। হালকা মেজাজের গান, তবু সেই রিদমে হাজারও কণ্ঠ মিলে মিশে একাকার আর্মি স্টেডিয়াম! এরপরই যেনো ‘পাগলা হাওয়া’য় উত্তাল হয়ে উঠে তারুণ্য। ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘মীরাবাঈ’ , ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’র মতো ঝড়ো গানের সাথে দর্শকের যেনো রীতিমত নাভিশ্বাস! জেমস শেষ করেন তার গাওয়া হিন্দি ছবি ‘গ্যাংস্টার’র তুমুল জনপ্রিয় গান ‘ভিগি ভিগি’ দিয়ে!

জেমসের পর পর্যায়ক্রমে মঞ্চে উঠে সোলস, মাইলস, আর্টসেল ও ওয়ারফেজ এর মতো জনপ্রিয় দলগুলো। নিজেদের জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে মাতিয়ে রাখে মধ্য রাত অবধি। দুপুর ২টা থেকে রাত প্রায় ১২টা অবধি গানে কণ্ঠে সুরে রাজধানীর হাজারও দর্শক কবে একাত্ব হয়েছে, তা হিসেবে করলে ফিরে যেতে হবে মহামারী করোনার আগের বছরগুলোতে!

বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অবিস্মরণীয় একটি নাম আইয়ুব বাচ্চু। সব সময় বাংলা সংগীতের অগ্রযাত্রা নিয়ে ভাবতেন আপাদমস্তক সংগীতের এই মানুষটি। বিশেষ করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে তিনি ছিলেন অগ্রগামীদের একজন। তার সেই ভাবনার সূত্রেই প্রায় ৯ বছর আগে কিংবদন্তী এই মিউজিশিয়ান প্রস্তাবনা রাখেন চ্যানেল আই এর ব্যবস্থপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এর কাছে এবং দাবি করেন প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর দেশের সেরা ব্যান্ডগুলোর উপস্থিতিতে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে যেন কনসার্ট হয় এবং দিনটিকে যেন ‘ব্যান্ড মিউজিক ডে’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তার এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য গত ৯ বছর ধরে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে ১ ডিসেম্বর পালিত হচ্ছে ‘ব্যান্ড মিউজিক ডে এবং কনসার্ট’।

ব্যান্ড সংগীত নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর দেখা সেই স্বপ্ন এই বছর থেকে আরও বিস্তৃত পরিসরে নিয়ে যেতে চ্যানেল আইয়ের সাথে যুক্ত হলো বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড এসোসিয়েশন (বামবা)। বাংলা ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্নের বিস্তৃত রূপ ‘বামবা-চ্যানেল আই ব্যান্ড মিউজিক ফেস্ট ২০২২’ পাওয়ার্ড বাই গান বাংলা।

প্রথমবারের মতো আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই কনসার্টে অংশ নেয় ১৬টি ব্যান্ড। কনসার্টটির ইভেন্ট পরিচালনা করেছে ব্র্যান্ডমিথ কমিউনিকেশন, সেট নির্মাণ ও আলো নিয়ন্ত্রণে ছিলো মুকিমস্ ক্রিয়েশন, সাউন্ড নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড এ্যাম্বেসি। পুরো অনুষ্ঠানটি ধারণ করেছে চ্যানেল আই।

ছবি: এজে সাদিক মাজেদ