দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে জরুরী বিভাগের ৩ টাকার টিকিটে প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখছেন ওষুধ কোম্পনির প্রতিনিধি। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় এলাকায়। এবিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সোমবার ১ মে সকাল সাড়ে ১১টায় ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ‘মা ফার্মেসি’ নামে একটি ওষুধের দোকানে এমন ঘটনা ঘটে।
যদিও নিয়ম রয়েছে, ফুলবাড়ী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন রোগী এলে প্রথমেই তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে পরমার্শ নিবেন। এসময় ওই রোগী চিকিৎসার জন্য তিন টাকা মূল্যমানের একটি টিকিট নিবেন এবং ব্যবস্থাপত্র লিখে দিবেন চিকিৎসক।
অথচ সোমবার ১ মে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ‘মা ফার্মেসি’ নামে একটি ওষুধের দোকানে বসে এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি আবু সাইদকে জরুরী বিভাগের তিন টাকা মূল্যমানের ওই টিকিটে ওষুধ লিখতে দেখা যায়। এসময় স্থানীয় যুবক শাহিনুল বাসার ফিজার বিষয়টি দেখতে পেয়ে ওই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কী ডাক্তার? আর এখানে বসে কেন সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখছেন?
সেই সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ওই যুবক হাসপাতালের টিকিটগুলো নিয়ে নেন এবং বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এরমধ্যে বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
আজ মঙ্গলবার ২ মে দুপুরে স্থানীয় যুবক শাহিনুল বাসার ফিজার একটি লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ওই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে পাওয়া জরুরি বিভাগের তিন টাকার ছয়টি টিকিট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। এছাড়াও তিনি অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।
ঘটনাটি স্থানীয় একজন গণমাধ্যম কর্মী জানতে পেরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে জানালেও তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
এদিকে এমন ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকিট (ব্যবস্থাপত্র) কিভাবে বাইরে এলো এবং ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কাছে কিভাবে গেল?
স্থানীয় যুবক শাহিনুল বাসার বলেন, ‘আমি ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখতে পাই, একজন ব্যক্তি সেখানে বসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন টাকার টিকিটে ওষুধ লিখছেন। তখন তাকে আমার বাচ্চার চিকিৎসার জন্য জিজ্ঞাসা করি, তিনি ডাক্তার কিনা। এসময় তিনি বলেন, তিনি এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি।
এসময় তার কাছ থেকে টিকিটগুলো নিয়ে প্রশ্ন করি, তাহলে সরকারি হাসপাতালের এতগুলো টিকিট কী করে আপনার কাছে এলো? চিকিৎসক না হয়েও কী করে তাতে ওষুধ লিখছেন? কথা বলার একপর্যায়ে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি সেখান থেকে সরে যান।
বিষয়টি নিয়ে আবু সাইদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং ব্যস্ততার ভান করে ‘আমি মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলবো’ বলে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমানের সাথে কথা বলতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তাকেও পাওয়া যায়নি। এসময় তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বাইরে আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শাকিলুর রহমান জানান, ‘এ ব্যাপারে সোমবার ১ মে সন্ধ্যায় ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছে। যার জিডি নং ১৩।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকিট কিভাবে বাইরে গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জরুরী বিভাগে অনেক লোকজন আসা যাওয়া করে। তাছাড়া ওই টিকিট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। একই সাথে তিনি আরও বলেন, টিকিট কেউ ছাপিয়েও নিতে পারে, তবে স্থানীয়রা যাকে অভিযুক্ত করছেন তার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশ্রাফুল ইসলাম সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি জিডি হয়েছে, তদন্ত করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. বোরহানুল সিদ্দিক জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক, আমার স্টাফ হলেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে।’