চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

১৫০ রুপির এক কাপ চা এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি

এক কাপ চায়ের দাম ১৫০ রুপি!! বিশ্বাস হয় না? তবে পড়ুন। ইউটিউবে সদ্য প্রকাশিত একজন বিখ্যাত পর্যটকের ভিডিও দেখছিলাম। Davud Akhundzada (ডাভুড আখুনজাদা???)। আজারবাইজানের এই চা-পাগল পর্যটক কলম্বোতে সাগর সৈকতে চায়ের দোকান থেকে এক বন্ধুকে নিয়ে দুই কাপ চা খেলেন। প্রতি কাপ চায়ের দাম ১৫০ রুপি!!। আবারো বলছি ১৫০ রুপি!! তারপর তিনি গুগল করে দেখলেন কত ডলার হয়। পাওয়া গেল ১ ডলার= ৩০০ শ্রীলংকান রুপি!!। এই মাত্র গুগলে দেখলাম ৩০০ নয়, ৩২৯ শ্রীলংকান রুপি সমান এক মার্কিন ডলার!!!

আমাদের বাংলাদেশেও চায়ের দাম বেড়েছে। ৫ টাকায় এখন আর চা পাওয়া যায় না। কমসে কম ৭/৮/১০ টাকা লাগবেই। শুধু চা নয়, সব কিছুর দাম বেড়েছে দেশে। যে সোনালি মুরগী গত শীতেও ২৪০ টাকা কেজি কিনেছি সেদিন কিনলাম ৩৫০ টাকা কেজি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বাড়ছে- এটা সত্য। তবে আমার মনে হয় একটা রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এখনো বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ। যদিও জীবনের মধ্যবয়সে এসেও একার বেতন দিয়ে আমি সংসারের সব খরচ মেটাতে পারি না। সংসারে স্ত্রীর বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ আছে। বলা যায় স্ত্রীর উপার্জন ছাড়া আমার সংসার বর্তমানের অবস্থায় থাকবে না। একটা দুর্নীতি-প্রিয়, বেপরোয়া পুঁজিবাদী সমাজের মানুষ বোধহয় এমনই হয়, কখনোই বর্তমান অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকে না। শুধু আরও পেতে চায়। সবাই শুধু টাকা কামাতে চায়। কারও মনেই সন্তুষ্টি নাই। অথচ আমরা কিন্তু শ্রীলংকার মত শিক্ষিত মানুষের দেশ থেকেও শক্তিশালী অবস্থানে আছি।

আমাদের চেয়ে কম উপার্জনের মানুষদের জন্য জীবন অবশ্যই আরও কঠিন, এটা স্বীকার্য। জীবনের এই কঠিন সময়ে আমি বলব সবাই পারলে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে পুনরায় খোঁজ নিন। কেন আমরা এখনো উন্নত রাষ্ট্র হতে পারিনি? নিজেকেই জিজ্ঞেস করুন। দারিদ্র্য বিমোচন একটা পদ্ধতিগত এবং সময়সাপেক্ষ বিষয়। বঙ্গবন্ধু এই রাষ্ট্রের সকলের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সমবায়-ভিত্তিক অর্থনীতি চালু করতে চেয়েছিলেন। আমলাতন্ত্রের বাড়াবাড়ি চিরতরে বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদদের খতম করতে চেয়েছিলেন। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভয়ে আতংকিত সামরিক-বেসামরিক আমলা, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, মুনাফা লোভী অসৎ ব্যবসায়ী, বিদেশিদের দালাল সাংবাদিক, সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জানতেন মুজিবকে হত্যা করা হবে। জিয়াউর রহমান তখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বলেছিলেন ‘গো এহেড’। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এইদেশে জিয়াউর রহমান, হুসেইন রশাদদের মত সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় ছিলেন। কিংবা খালেদা জিয়াও দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জিয়াউর রহমান, হুসেইন এরশাদ, খালেদা জিয়া সবাই মিলে এই দেশে কত শতাংশ দারিদ্র্য বিমোচন করতে পেরেছিলেন আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একা কত শতাংশ দারিদ্র্য বিমোচন করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন এই পরিসংখ্যান বের করার দায়িত্ব আপনাদের। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বহুদিন থেকে নানা নোংরা কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন। আপনারা কি চান বাংলাদেশ ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মত ধ্বংস হয়ে যাক? অসীম সম্ভাবনাময় এবং উন্নয়নশীল এই সুন্দর দেশটা বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাক? বাংলাদেশে দারিদ্র্য আছে, পাশাপাশি এটাও স্বীকার করতে হবে দারিদ্র্য কমছে দ্রুতগতিতে।

২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট-রিকভারি অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স অ্যামিড গ্লোবাল আনসারটেইনটি’ শিরোনামের প্রতিবেদন অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতিতেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঘটার প্রেক্ষিতে ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার হ্রাস পেয়ে ১১ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ২০২০ অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমছে।

অনেকে বলবেন, বাংলাদেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে, কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তায় বের হলেই গরীব লোক পাওয়া যায়। রিকশাচালকদের সংগ্রাম দেখলে মন খারাপ হতে বাধ্য। তাহলে বাংলাদেশের প্রকৃত বাস্তবতা কোনটা? দারিদ্র্যই কি বাংলাদেশের একমাত্র বাস্তবতা। নাকি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ক্রমশ বেগবান হচ্ছে? পড়াশোনা করে, কাজ শিখে, ব্যবসা করে, সরকারি-বেসরকারি নানা পলিসির সেবা নিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির দেখা পেয়েছেন এমন মানুষও আছে কোটি কোটি। বেকার আছে অনেক, আবার দারুণ সব চাকুরি পেয়ে, কাজ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন এমনও আছেন অনেকে। হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে দেখানো যাবে যারা সরকারি চাকুরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে বিত্তের অধিকারী হয়েছেন। এখানে মনে হয় গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে। আমি বলছি না, বিটিভি স্টাইলে শুধুই উন্নয়ন দেখাতে হবে। কিন্তু শুধুই নেতিবাচকতা চর্চাও সাংবাদিকতা হতে হতে পারে না। যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু ইস্যুতে এত বড় ষড়যন্ত্র করল, তাদেরই বাংলাদেশ বিষয়ক পরিসংখ্যানগুলো চলুন আমরা সবাই একটু দেখি। আর বিশ্বব্যাংক লাগবে কেন? নিজেরাই চোখ খুলে দেখতে পারি পরিবর্তনগুলো।

এখন প্রশ্ন হল আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন স্বীকার করব কি, না? স্বীকার করলে এক বাস্তবতা আর না করলে আরেক রকম। এই স্বীকার আর অস্বীকারের মধ্যেই আটকা পড়ে যাচ্ছে দেশের গরীব মানুষের ভাগ্য। গণমাধ্যম যদি সঠিক চিত্র তুলে না ধরে তাহলে আমাদের উচিত নিজে উদ্যোগী হয়ে বাস্তবতার বোঝার চেষ্টা করা। একটু সক্রিয় হলেই বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়। চলুন নিজেরা সক্রিয় হই, জানা এবং বোঝার চেষ্টা করি কী আসলে আমাদের অবস্থা। গণমাধ্যম যদি শুধু উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আতংক, অশান্তি ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠে তখন মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সঠিক বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করা। গণমাধ্যম যেমন মানুষকে তথ্য দেয় তেমনি হুশ কেড়েও নেয়। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানকে পশ্চিমা শক্তিগুলো লুটপাট করেছে শুধু গণমাধ্যমের শক্তি ব্যবহার করে। দিনের পর দিন নেতিবাচক খবর, মিথ্যা খবর দিয়ে জনমত নিজেদের অনুকূলে নিয়ে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে সব ধ্বংস করে দিয়েছে পশ্চিমারা। যেমন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে গণমাধ্যমের একাংশ লাগাতার নেতিবাচক এবং মিথ্যা সংবাদ দিয়ে মানুষের মন বিষিয়ে তুলে একটা প্রতিকূল ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল যা ছিল খুনিদের ভয়ংকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অনুকূলের। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব অনেক। জনগণ যদি সচেতন না থাকে, তাহলে সেই রাষ্ট্র কখনো সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)