চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

৬৭ বছরে পা দিলো আওয়ামী লীগ

৬৭ বছরে পদার্পণ করেছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিনের পথচলায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে দলটি। আগামীর পথচলায়ও দলকে নিষ্কলুষ রেখে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দলের প্রবীণ নেতারা।

ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে, ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককের সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫৫ সালে নতুন নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।

৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা পায় আওয়ামী লীগ। যার প্রতিফলন ঘটে ৭০’র নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালী জাতি যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তাকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতা এনে দেয় আওয়ামী লীগ, জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ দলটিকে দেশের অন্যতম প্রাচীন সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ভাষা, স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনে মহোত্তম গৌরবে অভিষিক্ত আওয়ামী লীগের সাত দশকের অভিযাত্রায় শান্তি, সমৃদ্ধি ও দিন বদলের লক্ষ্যে অবিচল আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী।

আর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে আমাদের স্বাধীনতা, বাঙালির স্বাধীনতা লুপ্ত হয়েছিলো। এই ২৩ জুনই আওয়ামী লীগের জন্ম। সেই আওয়ামী লীগের মাধ্যমে পলাশীর মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে আরেকটি আম্রকাননে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা হয়।

ইতিহাসবিদ, লেখক ও লোক সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান এই দলকে মূল্যায়ন করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোনো ক্ষুদ্র উচ্চাভিলাসী গোষ্ঠীর কোনো অশুভ শক্তির সঙ্গে স্বার্থগত আঁতাত বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার উদ্দেশ্যে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে ওঠা তথাকথিত রাজনৈতিক দল নয়।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর জাতির জনকের নেতৃত্বে শুরু হয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কাজ। কিন্তু ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়, ৩ নভেম্বর কারাগারের ভেতর হত্যা করা হয় জাতীয় ৪ নেতাকে। হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয় আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী।

তবে জনসমর্থনের দল আওয়ামী লীগ দুর্বল হয় নি। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হয় গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সেই পথও ছিলো কঠিন। বহুবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সবকিছুকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

আমু বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম তৃণমূল পর্যায় থেকে এবং তৃণমূল পর্যায় থেকে আসছে বলেই এতো ধাক্কা, এতো ক্ষয়ক্ষতির পরে আজকেও টিকে আছে।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন আবারো আঘাত আসে দলটির ওপর। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং তখনকার বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা।

২০০৬ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলে আবারো প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতে হয়। তবে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে পরপর দু’বার সরকার গঠন করে প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পূর্তি উদযাপন করছে আওয়ামী লীগ।

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবসমৃদ্ধ আওয়ামী লীগের ৬৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের লক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন উড়ানো এবং দুপুর তিনটায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সন্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে দলের গৌরবোজ্জ্বল ৬৬ বছর পূর্তিতে গৃহিত কর্মসূচি পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।