নানা উদ্যোগেও লাগাম টানা যাচ্ছে না খেলাপি ঋণের। ফলে মূলধন ঘাটতি বাড়ছে ব্যাংকগুলোর। এতে দিন দিন আর্থিকভাবে দূর্বল হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ১২ টি ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৭টি সরকারি, ৪টি বেসরকারি এবং ১টি বিদেশি ব্যাংক।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, যাচাই-বাছাই না করে অধিক মুনাফার আশায় ঋণ দেয়ার কারণে ওইসব ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ফলে বাড়তি অর্থ জোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। এ কারণে সংকট তৈরি হচ্ছে।
তারা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না ততদিন পর্যন্ত মূলধন ঘাটতির সমস্যা থেকে বের হতে পারবে না ব্যাংকিং খাত। সেজন্য খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো কঠোর অবস্থানে দাঁড়াতে হবে। আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ১২টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের (এপ্রিল -জুন) তুলনায় ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ গত বছরের জুন শেষে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৬ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: প্রধানত ২টি কারণে ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। এটিই মূল কারণ। কারণ খেলাপি ঋণ বাড়লে ওই ঘাটতিটা মুনাফায় টান দেয়। এছাড়া মালিকদের দায়িত্ব ওই টাকা পূরণ করা। কিন্তু মালিকেরা এটা করছে না। ফলে ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে।
তিনি বলেন: ব্যাংকগুলোতে দূরাবস্থা যাচ্ছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কমাতে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিকল্প নেই। এজন্য ব্যাংকগুলোর নিজেদের এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ব সোনালী ব্যাংক। বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংকের ৯৩৩ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৭৮৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৫৪৬ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৫৬২ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৬৯১ কোটি, এবি ব্যাংকের ৬৫২ কোটি টাকা, কমিউনিটি ব্যাংকের ২ কোটি ৭০ লাখ এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের মূলধন ঘাটতি ৫৯ কোটি টাকা।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৭০১ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশের প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।