চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

হলি আর্টিজান: বাংলাদেশে প্রশ্রয় পায়নি জঙ্গিবাদ

বাংলাদেশের ইতিহাসে যদি কয়েকটি কলঙ্কজনক ঘটনা উল্লেখ করা হয়, তাহলে সেখানে হলি আর্টিজানের নারকীয় হামলার ঘটনা প্রথম দিকে থাকবে। ধর্মের উগ্রতাকে সামনে রেখে চালানো এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশকে যেভাবে অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি করেছিল, ঠিক তেমনই এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্বের দরবারে রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রমজানের ঈদকে সামনে রেখে সবাই যখন উৎসবমুখর পরিবেশে কেনাকাটায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই একদল বিপথগামী ধর্মান্ধ তরুণ রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে চালায় ইতিহাসের নারকীয় এক হত্যাযজ্ঞ।

হলি আর্টিজানে জিম্মি করে দেশি-বিদেশি মোট ২২ জনকে হত্যা করে ধর্মের নামে পথভ্রষ্ট জঙ্গিরা। নিহত বিদেশি নাগরিকদের অধিকাংশ বাংলাদেশে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশ যে কখনোই সন্ত্রাসবাদ কিংবা জঙ্গিবাদের স্থান নয়, তা ওই হামলার পর বিশ্ববাসীকে নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, ধর্মের নামে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানো হলেও দেশের মানুষ তাকে কোনভাবেই সমর্থন করেনি, বরং হামলাকারীদের সন্ত্রাসী জঙ্গি হিসেবেই আখ্যায়িত করেছে। এমনকি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রবল জনমতের কারণে এ ঘটনায় নিহত জঙ্গিদের পরিবার তাদের লাশ পর্যন্ত গ্রহণ করেনি।

এর পাশাপাশি এই ঘটনার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সফল অভিযানে প্রায় সব শীর্ষ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম। গর্ব করার মতো বিষয় হচ্ছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এই সম্মিলিত অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল।

কিন্তু এই সফলতায় বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। কারণ, জঙ্গিবাদ এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কোনো দেশই জঙ্গিবাদের হুমকির আওতামুক্ত নয়। তাই জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তরুণ সমাজ কেন বিপথগামী হয়ে জঙ্গিবাদের পথে পা বাড়াচ্ছে তার কারণ উদঘাটন করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আরও বেশি সামাজিক প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে।

হলি আর্টিজান ও জঙ্গিবাদ বিষয়ে একটি জরিপের কথা জানিয়েছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট। হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তি সময়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার ২৫০ জনের মধ্যে এ জরিপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া যুবকদের অধিকাংশই ইন্টারনেট থেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় যদিও এ ধরনের কার্যক্রম রুখে দেওয়া প্রায় অসম্ভব, তবুও এ বিষয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে জঙ্গিবাদ যে কোন ধর্মই সমর্থন করে না, এই বিষয়টি সকল মানুষ বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছানো জরুরি। যাতে করে ধর্মের নামে তারা পথভ্রষ্ট হতে না পারে। এই বিষয়টি সরকারের একার পক্ষে করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে এই সমস্যা মোকাবেলায়। হলি আর্টিজানে নারকীয় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সকলের প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।