গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় জঙ্গি হামলার ৪ বছর আজ। এদিন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
ওইদিন হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন।
পরে সামরিক বাহিনী অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। সেই অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হয়।
হামলার চার বছর উপলক্ষে বুধবার (১ জুলাই) সকাল থেকে নিহতদের স্বজনরা শ্রদ্ধা জানাবে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে সীমিত পরিসারে শিডিউল মেনে জাপান, ইটালি এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতগণ শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। তবে সর্ব সাধারণ এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন না।
সাধারণত যেসব এলাকায় জঙ্গি হামলা হয়, সেইসব জায়গায় হামলার বর্ষপূর্তিতে আবারও হামলা হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টেসহ গুলশান এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, জঙ্গি হামলার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া হলি আর্টিজান হামলার পর গুলশানসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে।
বুধবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
গত বছরের ২৭ নভেম্বর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দেন আদালত।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যা শ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন এ সময় কাঠগড়াতেই উপস্থিত ছিলেন।
সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬(২)(অ) ধারায় সাত আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিচারক রায়ে বলেন, তাতে “ভাগ্যহত মানুষের স্বজনেরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।”
পেপারবুক তৈরির অপেক্ষা
গত বছরের নভেম্বরে রায়ে সাত জঙ্গির ফাঁসি ও একজনকে খালাস দেওয়া হয়। এখন পেপারবুক তৈরির অপেক্ষায় রয়েছে। পেপারবুক তৈরি হলে হাইকোর্ট মামলার আপিল শুনানি কার্যক্রম শুরু হবে।
হলি আর্টিজান বেকারির নারকীয় সেই রাত
২০১৬ সালের পহেলা জুলাইয় রাত ৯টার দিকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাঁচ জঙ্গি ঢাকার গুলশানের কূটনীতিক পাড়ায় অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে। জঙ্গিরা ভেতরে প্রবেশ করেই অতর্কিতভাবে গুলি চালানো শুরু করে।
বোমা, চাপাতি, পিস্তল নিয়ে ক্যাফের ভেতরে প্রবেশ করা এসব আক্রমণকারী রেস্তোরাঁয় আসা বিদেশীসহ সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। খবর পেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল এসময় ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান চালালে জিম্মিকারীদের ছোঁড়া গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।
রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নিতে পুলিশ ব্যর্থ হলে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২ জুলাই ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামে একটি বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে সেনাবাহিনীর প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এই অভিযান শুরু করে।
রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে নয়জন ইটালিয়ান নাগরিক, সাত জাপানী, দুই বাংলাদেশী, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকানের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করে প্যারা কমান্ডো দলটি। উদ্ধার করে রেস্তোরাঁয় জিম্মি থাকা দেশী-বিদেশী ১৩ নাগরিককে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আক্রমণকারী জঙ্গিরা সবাই বাংলাদেশী নাগরিক। তাদের নাম হচ্ছে নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মুবাশশির, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।