দেশের সড়ক মহাসড়কগুলোর দিন দিন মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে ওঠার ঘটনা নতুন নয়। তবে শঙ্কার বিষয় হলো এই মৃত্যু ফাঁদ বন্ধ না হয়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এর খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। মুহূর্তেই তাজা প্রাণ ঝরে যায় সড়কে। শনিবারও এমন কিছু মৃত্যুর খবর উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
চ্যানেল আই অনলাইনের একাধিক প্রতিবেদনে জানা যায় এমনই কিছু মৃত্যুর কথা। এরমধ্যে কক্সবাজারের রামুর রশিদ নগর এলাকার কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মালবাহী ট্রাক চাপায় বাবা-ছেলে নিহত হয়েছেন। তারা ইজিবাইকের যাত্রী ছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা একটি মালবাহী ট্রাক ওই ইজিবাইকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনুস সওদাগরের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তার ছেলে রুবেল। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।
এছাড়া দুর্ঘটনার কবল থেকে রেহাই পায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। মানিকগঞ্জের মিতরায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের জলাশয়ে ডুবে অ্যাম্বুলেন্সের দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা জানান, শুক্রবার গভীর রাতে গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ৫ যাত্রী নিয়ে ফরিপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি মিতরা এলাকার কালীবাড়ী মোড়ে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের জলাশয়ে ডুবে যায়। সেসময় চালক হেলপারসহ ৫জন বেরিয়ে আসতে পারলেও পেছনের সিটে থাকা দুই যাত্রী গাড়ির ভিতরে আটকে পড়ে মারা যান।
অন্যদিকে এসব দুর্ঘটনা ছাড়াও সংবাদমাধ্যমে আরও কিছু মৃত্যুর খবর এসেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় অন্তর মিয়া (১৫) নামের এক অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছে। শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কাউতলীর জেলা আদালতের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সকালে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় অন্তর। সকাল নয়টার দিকে শহরের কাউতলী এলাকা অতিক্রম করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের সামনের কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দিকে যায়। সে ময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ামুখী উত্তরা পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশাচালক অন্তর নিহত হয়।
গত দু’দিনে এসব দুর্ঘটনা ছাড়াও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত; মাগুরায় একটি বাস ও সবজিবোঝাই পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’জন নিহত, নারী-শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত; বাগেরহাটের কচুয়ায় বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গোবিন্দ লাল দেবনাথ (৫০) নামের এক গৃহশিক্ষক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যমে যে কয়টি দুর্ঘটনার খবর আসে, প্রকৃত দুর্ঘটনা এরচেয়েও বহুগুণ বেশি। কেননা সব ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে না।
উপরোক্ত দুর্ঘটনা ও হতাহতের কারণ পর্যালোচনা করলে লক্ষ্যণীয় যে, বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণ অসচেতনতা। এছাড়া নিয়ম না মানার প্রবণতাও অন্যতম প্রধান কারণ। মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল এবং মোটরসাইকেলের তীব্র গতির ফলেও একাধিক মৃত্যু হয়েছে। এসব অনিয়ম বন্ধ করতে পারলে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে কঠোর ভূমিকার বিকল্প নেই। এজন্য সড়কে নিয়ম মেনে চলাচলসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় আইনকানুন বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।