একটা সকালের কথা। বিষণ্ণ ছিল না। কিন্তু একটু ব্যতিক্রমের ছোঁয়ায় ঘেরা ছিল। শচীন টেন্ডুলকার ঘুম থেকে উঠতে পারছিলেন না। জিমে যাওয়ার তাড়া ছিল। তবু ওই ঘুম তাকে আঁকড়ে ধরেছিল। কিংবদন্তি বুঝে নিয়েছিলেন এই অলসতা তাকে বিদায়ের গান শুনিয়ে যাচ্ছে।
শচীন সম্প্রতি ‘লিংকডেলন’এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সে খবর ভক্তদের জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলাম।’ সেই সঙ্গে শুনিয়েছেন সেই সকালের কথা, যেদিন তিনি অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
‘২০১৩ সালের অক্টোবর। দিল্লিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ চলছিল। ২৪ বছর ধরে জিম দিয়েই আমার সকাল শুরু হতো। কিন্তু অক্টোবরের সেই সকালে কিছু পরিবর্তন টের পাই।’ লিখেছেন শচীন।
‘আমি বুঝতে পারি জোর করে ঘুম থেকে উঠছি। ওই দিনই প্রথম অনুভব করি জিম কঠিন কাজ!’
শচীন যে কঠিনেরে চিরদিন ভালোবেসে এসেছেন। ওই সকালের পর সেই ভালোবাসা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, ‘আমার থামা উচিত…এই আভাস পাচ্ছিলাম। যে খেলা আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ছিল, সেটা রুটিনে রাখতে পারছিলাম না।’
শচীন এই ঘটনার পর বেশিদিন খেলা চালিয়ে যাননি। ওই বছর নভেম্বরে কলকাতা এবং মুম্বাইতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে খেলে বিদায় নেন।
বিদায় নেয়ার আগে সুনীল গাভাস্কারের একটি কথা মনে পড়ছিল তার, ‘আমার শৈশবের নায়ক গাভাস্কার একবার বলেছিলেন, যখন তিনি লাঞ্চ এবং টি-ব্রেকের জন্য অধীর আগ্রহে ঘড়িতে চোখ রাখতে শুরু করেন, তখন থেকেই অবসরের চিন্তা করেন।’
‘হঠাৎ আমি বুঝতে পারি সেদিন তিনি কী বলতে চেয়েছিলেন। আমার শরীর আর মন বলছিলো হয়তো এখনই বুটজোড়া তুলে রাখা উচিত।’
ব্যাট হাতে সবুজ ঘাসে হাঁটার সময় গ্যালারি থেকে ভেসে আসতো ‘শচীন, শচীন’ রব। অবসরে শিহরণ জাগানিয়া এই সঙ্গীত আর শোনা হবে না; সেই ভাবনাও ভেবেছিলেন, ‘এই অনুভূতির সঙ্গে কিছুর তুলনা চলে না। কিন্তু কাছের বন্ধু আর পরিবারের সদস্যরা আমাকে বুঝিয়েছিল মনকে ওভাবে তৈরি করার এখনই সময়।’
‘বছরগুলো আমার চোখে ভাসছিল। জয়, পরাজয়, উদযাপন, চ্যালেঞ্জ, নীরবতা…দীর্ঘ ভ্রমণের কথা মনে পড়ছিল। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয় আমার জন্য স্বপ্নপূরণ ছিল। কিন্তু জীবনের ওই অধ্যায় এখন শেষ।’
স্বপ্নকে ছুঁতে হলে স্বপ্নের পেছনে ছুটতে হয়। শচীন ছুটেছেন। জ্বলেছেন, পুড়েছেন, রোদ হয়েছেন, ‘প্রথম ইনিংসে স্বপ্নের পেছনে ছুটেছি, দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছি স্বস্তি…।’