সিঙ্গাপুরে ‘ই-পেমেন্টে’ এর একটি বিজ্ঞাপনকে ‘স্পষ্টতই বর্ণবাদী বিজ্ঞাপন’ দাবি করে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় চাইনিজ, ভারতীয় ও মালয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে রোষাণল।
এমন বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়ার পর সিঙ্গাপুর সরকার ওই বিজ্ঞাপনটি সব জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে এবং নির্মাতাদের অভিযুক্ত করেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি এমন একটি বিজ্ঞাপন যেখানে সংশ্লিষ্ট সিঙ্গাপুরবাসীকে অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। ওই বিজ্ঞাপনের ওপর একটি র্যাপ ভিডিও করা হয়েছিলো, যেটির ফলে স্থানীয় ও সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মূলত ‘ই-পেমেন্ট অ্যাপের বিজ্ঞাপনটি ‘নেটস’ নামে সিঙ্গাপুরের একটি ই-পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো। যেখানে অভিনেতা ছিলেন ডেনিস চিউ। চিউ জাতিগতভাবে চাইনিজ। যিনি এই বিজ্ঞাপনে একজন ভারতীয় পুরুষ এবং মালয় মহিলাসহ চারটি চরিত্রের পোশাক পরে হাজির হয়েছেন। এজন্য তার একটি চেহারা ছিলো কালো, একটি অতিরিক্ত মেকআপ এবং অন্যটিতে হিজাব পরিহিত।
বিজ্ঞাপনের সঙ্গে একটি র্যাপ ভিডিও তৈরি করা হয়। যা প্রীতি নায়ার (যিনি প্রীতিপলস নামে পরিচিত) এবং তার র্যাপার ভাই সুভাষ নির্মাণ করেন।
এই ভিডিওটিকে ‘পূর্ণ বর্ণবাদী’ বিষয় হিসেবে দেখা হয়েছে সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে এই বিজ্ঞাপনটি ধনী শহর-রাজ্যে বর্ণবাদ বিষয়ে স্ফুলিঙ্গের মতো প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে। যেখানে ৭৬% লোকজন জাতিগতভাবে চাইনিজ, ১৫% মালয় এবং ৮% লোকজন ভারতীয় বসবাস করেন।
বিজ্ঞাপনটির বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানানোর পর নির্মাতারা একধরনের ক্ষমা চেয়েছিলেন। অবশ্য এই ক্ষমাকে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমালোচনা করে বলেছেন, ‘কপট ক্ষমাপ্রার্থনা’
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ‘বিজ্ঞাপনী সংস্থা হাভাস কর্তৃক পূর্বের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি একধরনের ছলনা ছিল।’
‘এটি একধরনের ছদ্মবেশী ক্ষমা চাওয়ার ভান। বাস্তবে এই বর্ণবাদী ভিডিওর মাধ্যমে বহু সিঙ্গাপুরবাসীর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। এটি উদ্বেগজনক।’
এর প্রতিক্রিয়া এত বেশি ছিলো যে, কারণে বিজ্ঞাপনের পেছনে থাকা বিজ্ঞাপনী সংস্থা হাভাস এবং বিজ্ঞাপনের অভিনেতা চিউ সহ যৌথ ক্ষমা চান। শেষ যেসব বিজ্ঞাপন মুদ্রিত হয়েছিলো তা সরিয়ে ফেলতে হয়।
তবে সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এই বিজ্ঞাপন প্রচারের পেছনের বার্তা হলো এই যে, ‘ই-পেমেন্ট সবার জন্য’। সে কারণেই ডেনিস চিউ একক প্রযোজনায় আন্তরিকভাবে একাধিক চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন। তবে এর ফলে অন্যরা দুঃখ পেয়েছেন। এই অনিচ্ছাকৃত আঘাত দেওয়ার জন্য আমরা দুঃখিত’।
মূলত এর প্রতিক্রিয়া তখনই আসে যখন, প্রীতি এবং সুভাষ নায়ার; ইন্ডিয়ান চরিত্রের জন্য ’কে মুখ্যাসামি’ নামে একটি র্যাপ মিউজিক ভিডিওতে প্রকাশ করেন। এতে করে পরস্পরকে ব্যাঙ্গ করে আরো ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে মূলত বর্ণবাদের ছোঁয়া দেখতে পায় সিঙ্গাপুর সরকার।
আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম নিশ্চিত করেছেন যে, সরকার সাইটগুলিকে র্যাপের ভিডিওটি নামিয়ে ফেলতে বলেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটি তদন্ত করছে।
চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে তিনি বলেন, এতে করে চীনা, ভারতীয় ও মালয়নরা পরস্পরকে আক্রমণ করছে। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে একই ধররে ভিডিও ব্যবহার করছে। এই বিষয়গুলোতে সংখ্যালঘুরা দেশে নিরাপদবোধ করবে কিভাবে?
এই বিষয়ে বিবিসি জানায়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই ভিডিও সরিয়ে ফেলার কথা বলেছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে জানায়, ফেসবুকে বর্ণবাদকে উস্কে দেওয়ার মতো কিছু রাখা হয় না। আমরা এ ধরনের কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলি যখন এই বিষয়ে আমরা জানতে পারি। ওই সব দেশের আইন ও আচরণকে যা আঘাত করে তা আমরা সরিয়ে ফেলতে উদ্যোগ নেই।