মুসলমানদের রোযার আবশ্যকীয় দু’টি বিষয়; সাহরি ও ইফতার। রমজানকে কেন্দ্র করে সাহরি ও ইফতারের ফজিলত বর্ণনা করা হয় হরদম, অন্যকে ইফতার করানোর ফজিলতও কম-বেশ সকলেরই জানা। কিন্তু সাহরি ও ইফতারে বিশেষত প্রতিবেশির হক সম্বন্ধে আলোচনা তেমন হয় না। সেজন্য এ বিষয়ে আমাদের জানাও কম। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস রাখি।
প্রতিবেশীরপরিচয়
সাধারণভাবে,যাদেরকে নিয়ে আমরা বসবাস করি যাদেরকে নিয়ে আমাদের পরিবেশ গঠিত তারাই আমাদের প্রতিবেশী। ইসলামী পরিভাষায়, সামনে এবং পেছনে, ডানে এবং বামে প্রতি চল্লিশ ঘর ‘প্রতিবেশী’ হিসেবে গণ্য।
ইফতারের ফজিলত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে সে ঐ রোযাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে; তাঁর সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হবেনা। (তিরমিযি শরীফ: ৮০৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে তৃপ্তিপূর্ণভাবে খাওয়াবে তাঁকে কেয়ামতের দিন আমার হাউজ তথা হাউজে কাউছার থেকে এমনভাবে পানি পান করানো হবে যে, জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত সে তৃষ্ণার্ত হবেনা। (বায়হাকি শরীফ)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইফতার তো যে কোনো রোযাদারকে খাওয়ালেই ফজিলত পাওয়া যাবে, প্রতিবেশীকে বিশেষভাবে খাওয়ানোর তাগিদ কোথায়, কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে একটি হাদিস শরীফ উল্লেখই যথেষ্ট হবে। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন: আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে, কার নিকট আমি উপহার পাঠাবো?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যার দরজা তোমার অধিক নিকটবর্তী। (বুখারী শরীফ, ২২৫৯) আম্মাজান হযরত আয়েশাকে প্রদত্ত রাসূলে খোদার উত্তরে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, যে যত নিকটবর্তী সে তত বেশি হকদার। আমার পাঁচজন প্রতিবেশী সমভাবে অভূক্ত, কিন্তু আমার তৌফিক আছে বড় জোর দু’জনকে খাওয়ানোর, এখন কোন দু’জনকে খাওয়াবো? অবশ্যই নিকটবর্তী দু’জনকে। আমার সামর্থ্য এবং তাদের অবস্থানের প্রেক্ষিতে বাকি তিন জনের উপর মোটেই জুলুম হবেনা।
প্রতিবেশীকে খাওয়ানোর বিশেষ তাগিদও স্বতন্ত্র হাদিস শরীফে এসেছে। রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি নিজে পেট ভরে খায় কিন্তু তার প্রতিবেশী অভূক্ত থাকে, সে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমানদার নয়। (মিশকাত শরীফ, ৪৯৯১)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যখন ঝোল পাকাবে তখন বেশি পরিমাণে পানি দেবে, অতঃপরতা সদিচ্ছার সহিত প্রতিবেশীর মাঝে বিতরণ করবে। (আদাবুলমুফরাদ, ১১৩) উল্লেখিত হাদিস থেকে প্রতিবেশীকে খাওয়ানোর ফজিলত আমাদের নিকট খুবই স্পষ্ট। এক প্রতিবেশীর নিকট অন্য প্রতিবেশীর মর্যাদাও ইসলামে স্বতন্ত্রভাবে বিদ্যমান। ইসলাম যেখানে সামান্য ঝোলেও পর্যন্ত প্রতিবেশীর হক রেখেছে, সেখানে আমাদের সাহরি-ইফতারেও যে প্রতিবেশীর হক রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
রমজানে আমাদের সাহরি এবং ইফতারে প্রতিবেশীর হক সাধারণ ভাবেই অন্যান্যদের তুলনায় বেশি। আমি দূরে কোথাও ত্রাণ পাঠালাম, কিন্তু আমার প্রতিবেশী অভূক্ত রয়েছে; এতে প্রতিবেশীর উপর অবশ্যই জুলুম হবে। আমি দূরবর্তী কাউকে ইফতার সামগ্রী দিলাম, কিন্তু আমার প্রতিবেশীর মাঝে কেউ ইফতার খেতে পারছেনা; ফলে তার প্রতি আমার অবচেতনেই জুলুম হলো, আমি হলাম জালেম।
এজন্য আমাদের রমজানে সর্বাবস্থায় প্রতিবেশীর উপর নজর রাখা উচিত। আমি ইফতার খাচ্ছি, প্রতিবেশীর কেউ না খেয়ে আছে কি-না তা আগে দেখা উচিত। মোটকথা, আমাদের সাহরি এবং ইফতারে প্রতিবেশীর যথেষ্ট হক আছে, তা থেকে যেন আমরা তাদেরকে বঞ্চিত না করি।
সর্বাবস্থায় যেন আমরা প্রতিবেশীদেরকে তাদের প্রাপ্য অগ্রাধিকার প্রদান করি। প্রতিবেশীদের মিলেই আমাদের বসবাস, সকলের মাঝে যেন সৌহার্দ্যতা বজায় থাকে সেভাবেই ইসলাম আমাদেরকে চলতে বলেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে সজাগ থাকার তৌফিক দান করুক।