গত সপ্তাহ থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে মৌসুমের প্রথম শীত শুরু হয়েছে। সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহও। তখন থেকে হিমেল বাতাসে কাঁপন ধরিয়েছে হাড়ে। শীতের মৌসুমে শীত পড়বে এটা স্বাভাবিক হলেও গত কয়েকবছর বৈশ্বিক আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে গত এক সপ্তাহ দেশজুড়ে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার সকালে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। সামনে তাপমাত্রা আরো কমে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রিতে নামতে পারে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তরের হিমেল বাতাসের প্রভাবে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমে আসছে। সঙ্গে আসছে বৃষ্টির মত আতঙ্কিত ঠাণ্ডা। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও নেমে যাবে।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ঋতুবৈচিত্র্য হারিয়েছে। গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম আর বর্ষাকালে অতি বৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে আনে। এবার ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শৈত্যপ্রবাহের মধ্যদিয়ে শীতের আগমন ঘটেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও দু’দিন তাপমাত্রা কমতে থাকবে বলে জানালেও গত এক সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে তাপমাত্রা বাড়েনি। আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর, পঞ্চগড়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী জেলায় আগামীকাল থেকে কুয়াশা আরও বাড়বে। সেই সাথে রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা। ওই অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ হলে রাজধানীতেও তার প্রভাব পড়বে। দিন যত যাবে শীতের মাত্রা ততো বাড়তে থাকবে।
গত কয়েকদিন সকালে সূর্যের তেজ ততটা ছিল না। বিকেলের দিকে সূর্যের তেজ কিছুটা বাড়লেও তাপমাত্রা কমেনি। তবে আজ সূর্য উঁকি দেয়নি বললেই চলে। শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে শীতজনিত রোগীও বাড়ছে। পঞ্চগড়ের কোনো সরকারি হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় শিশু রোগীদের নিয়ে অভিভাবকরা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুরে ছুটছেন।
কুড়িগ্রামে কনকনে ঠাণ্ডায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এদিন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কনকনে ঠাণ্ডায় কাজে যেতে পারছেন না মানুষ। হাসপাতালগুলোতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগী বাড়ছে। দিনাজপুরে হঠাৎ শীতে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গাইবান্ধায় গত তিন চার দিন ধরে সূর্যের আলোর দেখা মিলছে না। ঘনকুয়াশার সাথে অসুখ-বিসুখও বাড়ছে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
শীতে উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জীবনে যেনো দুর্ভোগ নেমে না আসে সেজন্য এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। প্রতি শীতে দেশের গরীব মানুষ মানবতের জীবন যাপন করে। উন্নয়নের কথা যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে যেন মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে কেউ কোনো রাজনীতি করতে না পারে।
উত্তরাঞ্চলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই বিরূপ আবহাওয়ার সময়টা সরকারকে আন্তরিকতার সাথে দেখতে হবে। শীতের সময় জনস্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়ার এখনই সময়।