এই সময়ের তরুণ লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় বলা হয় সাদাত হোসাইনকে। গল্প, উপন্যাস আর কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। গেল বছর মুক্তি পেয়েছে তার নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘গহীনের গান’। সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা না পেলেও পাঠক হারাননি এই তরুণ। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারের বইমেলাতেও আলোচনার শীর্ষে তার একাধিক বই। আর এসব নিয়েই চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি সাদাত:
প্রথমেই শুভেচ্ছা। এবারের বইমেলায় আসা আপনার বইগুলো সম্পর্কে যদি একটু ধারণা দেন?
এবার বই এসেছে চারটি। যার মধ্যে ৩ টি উপন্যাস ও একটি কবিতার বই। উপন্যাস ৩ টির মধ্যে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত মেঘেদের দিন ও মরণোত্তম মূলত ২০১৮-১৯ সালে অন্যদিন ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো। এবার বই আকারে এসেছে। আর কবিতার বই ‘তোমাকে দেখার অসুখ’ মূলত বছরব্যাপী আমি ফেসবুকে বিচ্ছিন্নভাবে যে কাপলেটগুলো লিখি, সেগুলোর সংকলন। তবে মূল বই হচ্ছে ‘অর্ধবৃত্ত’। দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস। এ দুটো এসেছে অন্যধারা থেকে।
কবিতার বই করছেন আপনি। পাঠক আসলে কতোটা কথাসাহাত্যিক সাদাত হোসাইন আর কবি সাদাত হোসাইনকে আলাদা করে নিচ্ছে?
খুব একটা আলাদা না বোধহয়। আমার কী মনে হয় জানেন? পাঠক অতোকিছু ভাবেন না, কে কবি, কে লেখক, কে বড়-ছোট। কোনটি কবিতা, কোনটি গল্প বা উপন্যাস! আমার এতোদিনের অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে এসব তাদের কাছে গৌন। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো টেক্সট। অর্থাৎ কার লেখায় তারা কতটুকু একাত্ম হতে পারছেন সেটি ইম্পর্ট্যান্ট! ধরুন, অনেকেই বলেন না যে, ‘এদেশে কবিতার পাঠক নেই’, কথাটা কিন্তু সত্যি না। হেলাল হাফিজ, আল মাহমুদ, রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, নির্মলেন্দু গুণদের কবিতা পাঠক আগ্রহ নিয়ে পড়েন নি? তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন না তারা? এখনো আছেন। তাহলে? যাদের কবিতা পাঠক পড়ছেন না, তারাই ওটি বলেন। আদতে পাঠক যাদের লেখার সাথে একাত্ম বোধ করেন, তাদের লেখাই পড়বেন। তা সে গল্প, উপন্যাস, কবিতা যা-ই হোক না কেন! তো আমার যেটি মনে হয়েছে, আমার কবিতার বইগুলো পাঠক যেভাবে গ্রহণ করছেন, সেটি রীতিমতো অবিশ্বাস্য! কবিতার বই নিয়ে আমি সেই অর্থে কোনো প্রচারণাই করি নি। আমার মূল আগ্রহ উপন্যাস। অথচ যে পরিমাণ কবিতার বই বিক্রি হয়, সেটি অভাবনীয়। এবার ‘তোমাকে দেখার অসুখ’ এসেছে, আমি দেখলাম ‘অর্ধবৃত্ত’ কিংবা অন্য কোনো উপন্যাসের সাথে ‘তোমাকে দেখার অসুখ’ যেন সবার হাতে হাতেই একটা সম্পূরক (সাপ্লিমেন্টারি) বই হিসেবে অনিবার্যভাবে রয়েছে। সবার হাতে। হাজার হাজার কপি। এটাকে আপনি কী বলবেন! আমি জানিনা। আমার কাছে মনে হয় পাঠক কথা সাহিত্যিক সাদাত হোসাইন বা কবি সাদাত হোসাইন, এভাবে দেখছেন না। তারা মূলত তাদের অনুভূতিকে যা স্পর্শ করতে পারছে, তা-ই গ্রহণ করছে। সেটি যা-ই হোক না কেন!
কিছুদিন আগে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক করলেন। এখন দর্শকের প্রত্যাশার চাপও সামলাতে হচ্ছে। সেদিক থেকে লেখায় কোন অসুবিধা অনুভব করছেন কি?
হ্যাঁ, করেছি। আসলে আমি প্রচণ্ড পরিশ্রমী মানুষ। দীর্ঘ অবসর আমাকে ক্লান্ত করে দেয়। পরিশ্রম বরং আমাকে সজীব রাখে বলে আমার মনে হয়। এ কারণে আমি সারাক্ষণ কাজের মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। তবে অবশ্যই সেই কাজ, যেগুলো করতে আমি ভালোবাসি। সেই কাজগুলোই আমার রিক্রিয়েশন। তো আমি সবসময়ই বলে এসেছি, সৃষ্টিশীল সকল মাধ্যমই আদতে গল্প বলে। সিনেমা থেকে পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি থেকে স্কাল্পচার। গল্প, কবিতা, উপন্যাসও। তো আমি যেহেতু নিজেকে ফিল্ম মেকার , আলোকচিত্রি কিংবা লেখক হিসেবে পরিচয় দেয়ার চেয়েও স্টোরি টেলার হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সেহেতু আমি আমার সক্ষমতা রয়েছে এমন সকল মাধ্যমেই গল্প বলতে চাই। সিনেমা সেই সকল মাধ্যমের একটি। ফলে এটিতে আমি প্রভূত আনন্দ পাই। তবে সিনেমা দীর্ঘ প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা সহ বিরাট তুঘলকি কর্মকাণ্ড! এতে বিস্তর সময়-শ্রম-প্রস্তুতি দরকার। এতে অন্যান্য কাজের সাথে এর সংঘর্ষ বা টানাপড়েনও শুরু হয়। বিশেষত সময় নিয়ে। ২০১৯ এ ই যেহেতু সিনেমাটা রিলিজ হলো, সো, ওই সময়টা প্রায় ছয়-সাত মাস ভয়াবহ সময় কাটিয়েছি আমি। একই সাথে বইমেলার বই, সিনেমার পোস্ট প্রসেসিং থেকে শুরু করে সেন্সর, ডিস্ট্রিবিউশন প্রসিডিওরস, ক্যাম্পেইন, প্রমোশন, মিডিয়াসহ নানান বিষয়। এক কথায় মাথা পাগল অবস্থা। তবে এটি একটা শিক্ষাও দিয়েছে। সামনে হয়তো এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি আরও ভালো থাকবে। ব্যালেন্স করে নিতে হবে সময়।
আপনার লেখা কোন উপন্যাসটি আপনি এখন পর্যন্ত এগিয়ে রাখবেন এবং কোন জায়গা থেকে?
আমি এভাবে অনেকবার ভাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ অবধি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। একটা বিষয় হতে পারে, আপনি যত লিখবেন, জানবেন, তত পরিণত হবেন। একটা বিষয় হচ্ছে, আপনার লেখার দুর্বলতা প্রকৃতপক্ষে অন্য কেউ আইডেন্টিফাই করতে পারবেনা, ওটা আপনার নিজেকেই করতে পারতে হবে। যদি নিজে সেটা উপলব্ধি করতে না পারেন বা বুঝতে না পারেন, তাহলে অন্যরা যত যাই বলুক না কেন, তা কাজে লাগবে না। মানে সেলফ এসেস্মেন্ট। আমার মনে হয় প্রথম উপন্যাস থেকে শেষ উপন্যাস অবধি আমি খুব ইনটেন্সড এন্ড ইনডেপথ সেলফ এসেসমেন্টের মধ্য দিয়ে এসেছি। ওটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, শেখাচ্ছে। কিন্তু কোনটি সবচেয়ে এগিয়ে রাখবো, সেই সিদ্ধান্তে আমি পৌঁছাতে পারিনি। যেমন আরশিনগর আর মানবজনম-কে আমি গল্পের দিক থেকে এগিয়ে রাখছি। আবার অন্দরমহল আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ মনে হয় আমার কাছে এই অর্থে যে এটি আমি সবচেয়ে পরিশ্রম করে লিখেছি। প্রায় ২০০ বছর আগের এক হিন্দু জমিদার পরিবারের অন্দরমহলের ভয়াল রাজনীতির গল্প। এটাকে আমি পলিটিক্যাল আস্পেক্ট থেকে দেখি। এরপর নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, এটি কন্টেম্পোরারি সোশ্যাল-পলেটিক্যাল ইস্যুজ নিয়ে লেখা। যেখানে নারীর অবস্থান ও যুদ্ধ শেষ অবধিও কেন মুখ থুবড়ে পড়ছে তার একটা দৃশ্য আমি দেখাতে চেয়েছি আমার মতো করে। নির্বাসন আমার সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় উপন্যাস। এই উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে আমি দারুণ আনন্দ পেয়েছি। ফ্ল লেস যাকে বলে। এবং এটি সম্ভবত পাঠকের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি তীব্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এটার সমাপ্তিটা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা এখনো চলছে। অসংখ্য পাঠক এর দ্বিতীয় খণ্ড চাইছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেকেই হাতে লেখা পোস্টারও করেছেন, এর দ্বিতীয় খণ্ড চেয়ে। আমি যেখানেই যাই, পাঠকের তীব্র দাবী এর দ্বিতীয় খণ্ড তারা চান। এটা ইন্টারেস্টিং এবং ইন্সপায়ারিং, যেখানে কেউ কেউ বলেন আমি অযথা টেনে উপন্যাস লম্বা করি, সেখানে এতো বিশাল সংখ্যক পাঠক এই চারশো পাঁচশো পৃষ্ঠার উপন্যাসেও সন্তুষ্ট নন। এবার অর্ধবৃত্ত লিখলাম, অবিশ্বাস্য সাড়া। ছদ্মবেশ প্রথম থ্রিলার, বইমেলায়তো এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়, কবে এটার নেক্সট সিরিজ আসবে! সব মিলিয়ে আমি আলাদা করতে পারিনা। যখন লিখি, প্রবল ভালোলাগা-ভালোবাসা নিয়েই লিখি, আর তার সাথে পাঠকের ভালোলাগা যখন মিলে যায়, তখন আলাদা করা কঠিন। এই যে মেঘেদের দিন লিখলাম, কিংবা মরণোত্তম। এগুলো ছোট আকারের উপন্যাস। অথচ লিখতে গিয়ে আমি আনন্দ পেয়েছি। পাঠকও তুমুল ভালোবাসায় গ্রহণ করেছেন।
হুমায়ূন আহমেদ তরুণ লেখক পুরস্কার পেয়েছেন কিছুদিন আগে, সেজন্য অভিনন্দন! এই পুরস্কার কি লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাসী করছে নাকি কেবল স্বীকৃতি হিসেবেই দেখছেন?
লেখকের সত্যিকারের স্বীকৃতি পাঠক। সেটা মোটামুটি আমি পেয়েছি। এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর হয় না। তবে হ্যাঁ প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি আপনাকে আনন্দিত করবে, অনুপ্রাণিত করবে। আমি এই পুরস্কারটিকে সেভাবেই দেখছি।
আপনার লেখা ও লেখা সংক্রান্ত অনেক সমালোচনায় দেখা যায়। আপনি কি সেসব পড়েন নাকি এড়িয়ে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমার বোঝাবুঝি খুব পরিষ্কার। স্পষ্ট। আমার লেখালেখি নিয়ে যে পরিমাণ প্রশংসা হয়, তার তুলনায় সমালোচনার অংশ খুবই গৌণ। ফলে আমি নিজেকে একটা বোঝাপড়ার মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি যে আমার পক্ষে আসলে কার কতটুকু সমালোচনা নেয়া সম্ভব। ধরুন, একই বিষয়ে পাঁচ সমালোচকের পাঁচ ধরনের এঙ্গেল থেকে মতামত। তখন আপনি কোথায় যাবেন? কারটা গ্রহণ বা বর্জন করবেন? তো আমি এসব দেখতে দেখতে এক ধরনের সিদ্ধান্তে এসেছি যে পৃথিবীতে এমন কোনো সৃষ্টিশীল কাজ নেই যা সমালোচনার ঊর্ধ্বে! অর্থাৎ অবিসংবাদিত কিছু নেই। ফলে এ নিয়ে বিচলিত হওয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, আপনাকে এটুকু বুঝতে পারতে হবে, কোন সমালোচনাটি গ্রহণযোগ্য কোনটি বর্জনীয়। একইভাবে কোন প্রশংসা গ্রহণযোগ্য কোনটি বর্জনীয়। এটি বুঝতে পারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি হচ্ছে সমালোচনার নামে সোশ্যাল মিডিয়াতে আজকাল যা হচ্ছে তা আদতে কী? আসলেই কি তা সমালোচনা হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার যোগ্য? সমালোচনাও কিন্তু একধরনের সাহিত্য। তো সমালোচনাকে প্রথমত সমালোচনা হয়ে উঠতে পারতে হবে। এটা খুব জরুরী। আমার যদি আপনার জানাশোনা, পার্স্পেক্টিভ, বোঝাপড়ার প্রতিই সমীহ না থাকে, আপনাকে-আপ্নার চিন্তাকে গৌণ মনে হয়, অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তাহলে আপনার সমালোচনা আমার কাছে তুচ্ছ বা গুরুত্বহীন মনে হবে। ওসব আমি ধর্তব্যের মধ্যেই আনবো না। অর্থাৎ আপনাকে সমালোচক হয়ে উঠতে হলেও আমার কাছে আপনার নিজেকে আগে প্রমাণ করতে হবে। আজকালকার বেশিরভাগ সমালোচক বা সমালোচনা কী! ধরুন সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আজকাল সবারই একটি আরোপিত মিথ্যে আইডেন্টিটি রয়েছে। প্রচুর ছেলে মেয়ের সাথে আমার পরিচয় রয়েছে যারা অনলাইনে নীলতিমির ন্যায় বিরাট। বাট বাস্তবে চুনোপুঁটির চেয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। পড়াশোনা, জানা, বোঝাপড়ার দিক থেকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ। তথাকথিত সমালোচকদের মধ্যে এদের সংখ্যাই বেশি। এরা একধরনের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগে। মানে এদের নিজেদের কোন পরিচয় নেই, করণীয় নেই। ফলে এরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের আরোপিত আইডেন্টিটি তৈরির জন্য, আলোচনায় আসার জন্য জনপ্রিয়, প্রতিষ্ঠিত মানুষদের নিয়ে উদ্ভট সব কর্মকাণ্ড, সমালোচনায় রত হয়।দেখবেন অনলাইনে অনেকেই আছেন, দলবেধে- তারা লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হেটার বা সাকিব আল হাসানের হেটার। আয়মান সাদিক বা সাদাত হোসাইনের হেটার। ভাবুনতো, আরেকজনের হেটার হিসেবে নিজেদের আইডেন্টিটি তৈরি করতে হচ্ছে। নিজেদের আলাদা কোনো আইডেন্টিটি নেই। কী ভয়ানক ডিসগ্রেস! আত্মপরিচয় সংকটে ভোগা মানুষ! যেহেতু এই আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়, ফলে এদের একটি সংঘবদ্ধ দল হয়ে যায়। এরা সমালোচনার নামে দলবদ্ধভাবে ক্রমাগত হেট্রেড ছড়াতে থাকে। আক্রমণ করতে থাকে। এতে করে যেটি হয়, সমালোচনার যে ওজন, যে সংজ্ঞা, যে গুরুত্ব সেটি পলকা হতে থাকে। গুরুত্ব হারাতে থাকে। এই চর্চাটা সমালোচনার জন্যই ক্ষতিকর। এতে করে সমালোচনা তার ক্রেডিবিলিটি হারায়। তো এসব কারণে আমি খুব সতর্কতার সাথেই সিদ্ধান্ত নেই, কোন সমালোচনা, কার সমালোচনা কিংবা প্রশংসা আমি কতটুকু গ্রহণ করবো বা গুরুত্ব দিবো আর কাকে কতটুকু গুরুত্বহীন মনে করব!
কখনো কি মনে হয় আপনার সমালোচকরাও হয়তো সঠিক বলছেন?
কেন মনে হবে না? অবশ্যই মনে হয়। এই প্রশ্নের উত্তর আমি উপরের প্রশ্নেই দিয়েছি। সমালোচককেও আমার কাছে যোগ্য মনে হতে হবে, আমার কাছে তার যোগ্যতা, ভাবনার মাল্টিলিনিয়ার এপ্রোচ, বোঝাপড়ার এঙ্গেল, জানাশোনা এবং নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ দিতে হবে। যার তার সমালোচনাকে আমি সমালোচনা হিসেবেই স্বীকার করতে নারাজ। গ্রহণ বা সঠিক মনে করাতো অনেক পরের ব্যাপার। তবে কেউ যদি তার সম্পর্কে সমীহ জাগাতে পারেন, তার সমালোচনার এনালাইসিস আমাকে কনভিন্স করতে পারে, সেটি অবশ্যই আমি গ্রহণ করি। অর্থাৎ আমাকে কনভিন্স করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
কথা হলো- উপন্যাস হচ্ছে, কবিতা হচ্ছ, কিন্তু ছোট গল্প হচ্ছে না অনেকদিন। ছোট গল্প নিয়ে কোন প্ল্যান?
ছোট গল্প লেখা আমার কাছে খুব কঠিন মনে হয়। খুব প্রস্তুতির বিষয় মনে হয়। আমার লেখালেখির শুরু কিন্তু ছোটগল্প দিয়ে। এরপর দীর্ঘসময় ছোটগল্প লেখার জন্য যে সময় সেটি আমি নিশ্চিত করতে পারছিলাম না। সেই মনঃসংযোগও করতে পারছিলাম না। ফলে লেখা হয়ে উঠছে না। তবে সামনে ইচ্ছে আছে।
এ বছর আপনি ‘মরণোত্তম’ নামে যে উপন্যাসটি লিখেছেন তা নিয়ে অনেকের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। এই বইটা নিয়ে যদি কিছু বলেন?
এটি কন্টেম্পোরারি সোশ্যাল ইস্যুজ নিয়ে। যেখানে আমাদের প্রচলিত জাস্টিস সিস্টেম, প্রটেস্ট, পলিটিকস, সেলফ এসেসমেন্ট, ম্যাস রিয়েকশন প্যাটার্ন অফ থিংকিং অ্যান্ড রিফ্লেকশন এসব পোর্ট্রে করার চেষ্টা করা হয়েছে, খানিকটা ব্যাংগাত্মকভাবে…! যার সমাপ্তিটা আমার কাছে মনে হয়েছে একটা সোজোরে চপেটাঘাত আমাদের জন্য…। যেখানে জীবনের চেয়ে মরণ-ই উত্তম- মরণোত্তম! ।
আপনি চলচ্চিত্র, সাহিত্য, আলোকচিত্র ইত্যাদি মাধ্যমে কাজ করছেন। সবমিলিয়ে নিজের প্রতি নিজের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে কি?
আমার যাত্রা কেবল শুরু। এখুনি এ ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সুযোগ হয়নি। আমি দুইহাতে কাজ করছি। কাজ করতে আনন্দ পাচ্ছি। স্বতস্ফূর্ত থাকছি। এটিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। আর সবকিছু এখানে গৌণ। ফলে স্বতস্ফুর্ত আর আনন্দ পাওয়াটাকেই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে নিচ্ছি। হতে পারে সেটিই প্রত্যাশা পূরণের মূল জায়গা।