১৯৮৪ সালে সামরিক শাসক এরশাদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ শুরু করেন৷ এরপর প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে আগেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়৷ সরকারের তরফ হতেই এসব সংলাপের আহ্বান জানানো হয়৷ এবার ছিল ভিন্নতর৷ সরকার সংলাপে আগ্রহী ছিল না৷ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপ চেয়ে সরকারকে চিঠি দিলো৷ সরকারও তা মেনে নিয়ে একেবারে দিন তারিখ নির্ধারণ করে দিল৷ এবার শুরু হলো অন্যান্য দলেরও সংলাপে আগ্রহী হয়ে ওঠা৷
সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিলো যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টি৷ সবার আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন ড. কামাল হোসেন। সে চিঠির সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান।
দ্বিতীয়বার সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী তাদের ২ নভেম্বর রাতে আলোচনার সময় ঠিক করে দেন৷ এরপর সংলাপ চেয়ে চিঠি দিল জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। বড় দল বিএনপি ছোট দলের উপর ভর করে যেচে ক্ষমতাসীন দলের সাথে আলোচনার টেবিলে গেল৷বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও কি সংলাপে যাচ্ছে? বামপন্থী ও ইসলামপন্থী দলগুলো ও কি সংলাপে যাচ্ছে?
সংলাপে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর প্রতিবাদ ও তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানববন্ধনে বলেছিলেন: খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ বা নির্বাচন কোনোটাই ফলপ্রসূ হবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এবং নির্বাচনের বাইরে রাখতে সুপরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। সরকার একদিকে সংলাপের প্রস্তাব পাঠিয়েছে, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করেছে৷ এই দুটো সাংঘর্ষিক। এটা গণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিফলন ঘটায় না। সংলাপের সাথে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির কি সম্পর্ক? সংলাপ কি পারবে আদালতের রায় পাল্টে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিতে? যদি তাই না হয় কেন এই অযৌক্তিক দাবি? আর সরকার কি সংলাপ চেয়ে চিঠি দিলো না তারা দিল?
অন্যদিকে একটি দৈনিক পত্রিকা লিখেছে, ফখরুল আলমগীরকে কি বহিষ্কার করেছেন বেগম খালেদা জিয়া? বিএনপিতে এই গুঞ্জন নিয়ে তোলপাড় চলছে। এই গুঞ্জনের জের হিসেবে গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা এবং দলকে ভুল পথে পরিচালিত করার অভিযোগে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া দলের মহাসচিবকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন৷ দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সংলাপে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বেগম জিয়া ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিএনপির একটি অংশ দাবি করেছে। তারা বলছেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬১২ নম্বর কেবিনে বন্দী দলের চেয়ারপারসন এক গোপন বার্তায় এই নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এটাকে ‘গুজব’ এবং বিভ্রান্তি ‘সৃষ্টির নোংরা খেলা’ বলে দাবি করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। কারণ গত কয়েকদিন বেগম জিয়ার সঙ্গে কারওরই কোনো দেখা সাক্ষাত হয়নি। বিএসএমএমইউতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বেগম জিয়াকে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে কোনো বার্তা পাঠানো সম্ভব না।’ আসলে বিএনপির অভ্যন্তরে কী ঘটছে? তাদের এখনকার মূল নেতা বেগম খালেদা জিয়াও নন তারেক রহমানও নন৷ এখন তাদের মূল নেতা হয়ে উঠছেন সাবেক আওয়ামী লীগ ও পরবর্তীতে গণফোরাম নেতা ড.কামাল হোসেন৷ তিনি আবার নিজেকে এখনও বঙ্গবন্ধুর সৈনিকই ভাবেন৷
সংলাপ শুরু হলো৷ এর শেষ কিভাবে হবে?যখন বিভিন্ন দলের দাবির মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলছেন, তখন দলগুলো কে কোন দাবির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে? বিএনপি বলছে, সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবির ওপরই জোর দেবেন তারা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ৭ দফার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে কীভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যায় সংলাপে সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
সংলাপ সম্পর্কে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাদের সংলাপে ডাকেননি। তারা চিঠি দিয়ে দেখা করতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সাড়া দিয়েছেন, বলেছেন আসুন। দেখা আগে হোক। তারা দেখা হওয়ার পরে কী বলেন, কী দাবি করেন, সাক্ষাতের পরে তার পরিণতি বলা যাবে। আগেভাগে কিছু বলা সম্ভব নয়৷তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগেরবার সংলাপের আহ্বান করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে বিএনপিকে। এবারও বিএনপি দলীয়ভাবে সংলাপ নিয়ে যেটা বলতে শুরু করেছে, তা ভালো লক্ষণ নয়। তবে, আমরা আশাবাদী হতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে সংলাপে ডাকেননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংলাপে ডেকেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে। বিএনপি প্রধান ও বড় দল হলেও তারা ঐক্যফ্রন্টেরই একটি অংশ। এর নেতৃত্বে রয়েছেন ড. কামাল হোসেন। এই সংলাপ বিএনপির নেতৃত্বে নয়, হচ্ছে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে যেতে ঐক্যফ্রন্ট যে তালিকা করেছে, তাতে বিএনপির নেতা রয়েছেন পাঁচ জন। এছাড়া গণফোরাম ও জেএসডি থেকে তিনজন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও নাগরিক ঐক্য থেকে দুই জন করে এবং এর বাইরে যাবেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
অলি আহমেদ মনে করে, এই তালিকাটি যৌক্তিক হয়নি। বলেন, ‘সংলাপে যাওয়ার তালিকা দেখলাম তাতে আশ্চর্য হয়েছি। কারণ বিএনপি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেখানে তালিকায় তাদের কমপক্ষে ১২ জনের নাম থাকা দরকার ছিল।’ ‘৮০ সালের পর থেকে যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি, নির্বাচন করলেও জয়ী হতে পারেনি তাদেরও তিনজন, পাঁচজনের নাম। এটা বিএনপির জন্য লজ্জার। প্রয়োজনে বিএনপি আলাদা সংলাপে যেতে পারত। লন্ডনে অবস্থান করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছেন অন্যকথা৷
তিনি বলছেন, খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে শিগগিরই আন্দোলনের ডাক আসছে। গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, জেলা, পৌরসভাসহ সকল পর্যায়ে যার যার অবস্থান থেকে কঠোর আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আন্দোলনের ডাক দেন আর সাধারণ সম্পাদক সংলাপে যান৷ তাও নিজে আমন্ত্রিত হয়ে নয় জামানত হারানো দলের সঙ্গী হয়ে! সরকার অবৈধ হলে অবৈধের সাথে আবার সংলাপ কিসের? দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেবে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক৷ অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সে সরকারের সাথে যেচে সংলাপে যাবে এটা কি দলের চরম স্ববিরোধিতা নয়?
বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ তারা হলেন: (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার ১০ দিন আগে ৭ নম্বর ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পূর্বে ৭ ধারা বিলুপ্ত করে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলে এই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি যে সংশোধনী দিয়েছিল, তা গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বিএনপির সংশোধনী গ্রহণ না করলে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
তবে কি খালেদা-তারেককে রাজনৈতিক নেতৃত্ব হতে সরাতেই ড.কামালকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে? সংলাপ হবেনা এমন ধারণার মাঝেই হঠাৎ সংলাপ শুরু হয়ে গেল৷ ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের এক জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া ‘আজ-কালের’ মধ্যে সংলাপের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরদিন খালেদা জিয়াকে ফোন করে ৩৭ মিনিট কথা বলেন এবং গণভবনে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু খালেদা জিয়া ‘হরতালের মধ্যে’ আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো৷ বিএনপি কেবল বর্জনই করেলোনা তা প্রতিহতের চেষ্টাও চালালো৷ বিএনপি তখন অবৈধ সরকারের সাথে কিসের সংলাপ বলতে থাকে৷ সরকার উৎখাতের জন্য টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিতেও শুরু করে। এসব কর্মসূচি চালু থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুবরণ করেন। সে সময়ে সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির গুলশানের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি সেদিন৷ ভাবখানা ছিল এ-ই, অবৈধ সরকারের কিসের প্রধানমন্ত্রী, কিসের সাক্ষাৎ? সংলাপে যেতে আগ্রহী দলের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ ইতোমধ্যে সংলাপে যেতে চিঠি দিল বাম গণতান্ত্রিক জোট ও আসল বিএনপি৷ অথচ এসব দল বিগত দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি৷
সবার আগে সংলাপ হল ঐক্যফ্রন্টের সাথে৷ কি হবে এই সংলাপ প্রক্রিয়ার? আমরা অতীতে বহু সংলাপ দেখেছি৷ সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। কখনো আবার সংলাপের টেবিলে বসানোই সম্ভব হয়নি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী অন্যান্য দলগুলোকে৷ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের আমলে সংলাপের একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়। ১৯৯৪ সালে মাগুরার উপনির্বাচনে কারচুপির ঘটনা ঘটলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল-অবরোধ শুরু করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। কমনওয়েলথ মসহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা ও তার বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টেফান বিবাদ মেটাতে ঢাকায় আসেন। তার দূতিয়ালিও তখন ব্যর্থ হয়। ১৯৯৫ সালে সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা শুরু করেন বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, ফখরুদ্দীন আহমদ ও ফয়েজ আহমদ। সেই আলোচনাও সফলতার মুখ দেখেনি।
২০০১ সালে নির্বাচনের আগে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের সাব্কে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ ও তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় আওয়ামী লীগের আন্দোলন। ওই সময় বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বৈঠকে বসেন। তাদের সেদিনের বৈঠকও ফলপ্রসূ হয়নি।
২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের সময় জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকায় আসেন। তার মধ্যস্থতায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে আওয়ামী লীগের ওই সময়ের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সে বৈঠকও কোনো ফল আনতে পারেনি৷ ফলে এবারের এই চলমান সংলাপ প্রক্রিয়া কতটা সুফল বয়ে আনবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় জনমনে৷ তবে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন দেখাদেখি ও একত্রে নৈশভোজ গণতান্ত্রিক সহনশীল রাজনীতির জন্য সহায়কই বটে৷ এবারের সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কারও মধ্যস্ততা ছাড়া৷ সব দল এতে অংশগ্রহণ করলে একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে৷ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনেও আর বাধা থাকবেনা৷ এতে ভুল প্রমাণিত হবে তারেক রহমান কর্তৃক অবৈধ সরকার বলা ও আন্দোলনের ডাক৷ গয়েশ্বর রায় সংলাপে যায়নি৷ রিজভী প্রতিনিধি দলেই নেই৷ বিএনপিতে কি অভ্যন্তরীন সংকট ঘনীভূত হচ্ছে?এ প্রশ্নটাই অনেকের৷ আসল সত্য উন্মোচনে অল্প সময়ের অপেক্ষা৷
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)