প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে তার কাছের মানুষ খুব একটা ভাবেন না বলে মনে হয়। উনি কী চান বা চান না সেটাও থোড়াইকেয়ার করেন মনে হয়। এর প্রমাণ মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর এবারের লন্ডন সফরে।
এজন্য ২২ এপ্রিল লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের একটি ঘটনার দিকে চোখ দিতে পারেন। গণমাধ্যমের খবর বলছে, প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বক্তব্য রাখায় নাখোশ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের মাঝখানে হঠাৎ লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের নাম ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মঞ্চে বসেই তাৎক্ষণিক হাতের ইশারায় জানতে চান, সে কীভাবে এখানে এলো? কে বক্তব্যের সুযোগ দিয়েছে নাজমুলকে?
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান সঞ্চালককে কাছে ডেকে নিয়ে জানতে চান, নাজমুল কীভাবে এখানে আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেলো? (সুত্রঃ কালেরকন্ঠ, ২২ এপ্রিল)
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সফলভাবেই তার মেয়াদ শেষ করেন। এর পরপর লন্ডনে পাড়ি জমান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, কিন্তু অজানা কারণে নাজমুল আলম লন্ডনে- এমনই লিখেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
নাজমুল আলম যেকোনো কারণে যেকোনো দেশে যেতে পারেন, তাতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু নাজমুল আলম এমন কী করলেন যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক হওয়া ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের ওপর এতো অসন্তুষ্ট? এর কারণ আমরা আমজনতা না জানলেও জানবেন তার কাছের মানুষজন।
যাকে এতো অপছন্দ করছেন প্রধানমন্ত্রী, তাকে বক্তব্য দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়াটা মোটেও ভালো কাজ হয়নি। আমরা দেখছি, বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী তার কথায় বুঝিয়ে দেন উনি কী পছন্দ করছেন বা কোনটা করছেন না। কিন্তু তার দলের নেতা বা কাছের মানুষেরা কি সেটা বুঝতে পারেন না! নিজ দলের নেতাকর্মীরা তাদের দলের প্রধানের ব্যাপারে এতো উদাসীন হলে বাকি মানুষের কাছে কি আশা করবেন?
দলের অনেক নেতাই ব্যস্ত নিজের পকেট ভারি করতে। সত্যিকারের দলপ্রেমীরা দলের কাছ থেকে কিছু না পেলেও দলকে উজাড় করে দিয়ে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করছেন, সাফল্য আনছেন, অর্জন করছেন দেশের জন্য সম্মান। কিন্তু তার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তার কিছু মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মীর অন্যায় আচরণ, কথা ও আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড।
যা হোক, ফিরে আসি আগের কথায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে চাইছেন সেভাবে তার সরকার ও দল চললে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না। উনি যেভাবে নিরলস কাজ করছেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভাবছেন, তেমন করে বাকি মন্ত্রী, নেতাকর্মীরা ভাবছেন না। ভাবলে দেশের চেহারা অন্য রকম হয়ে যাবে।
অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিহীন যে দেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছিলেন, সে দেশ হয়ত অচিরে ধরা দেবে। কিন্তু দলের ও সরকার প্রধানকে বিড়ম্বনায় ফেলে নিজের আখের গোছাতে রাজনীতি করলে, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়িয়ে, দেশের ব্যাকগুলোকে খোকলা বানিয়ে সাথে ন্যায়-নীতির বুলি ঝাড়লে আর কিছু হোক বা না হোক, অচিরেই মানুষ মুখ খুলবে, কোন ধারায় তাদের আটকে রাখা যাবে না।
শেখ হাসিনা একা একজন লড়ে চলেছেন লৌহমানবী হয়ে, তার কঠিন যাত্রাপথকে দুর্গম করে তুলছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে নির্মূল করা জরুরি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)