দুই যুগ আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় করা মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৭ জনের মধ্যে ৪৩ জন হাইকোর্টে আপিল করেছেন।
দুই যুগ আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় করা মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৭ জনের মধ্যে ৪৩ জন হাইকোর্টে আপিল করেছেন।
আপিলকারীদের মধ্যে ৮ জন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত, ২২ জন যাবজ্জীবন ও ১৩ জন ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছেন।
আপিলকারীদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আজ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে ইন্টারেস্টেড গ্রুপ যারা ছিল অর্থাৎ স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাকর্মীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে খুশি করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে, যেটাকে আমরা মনে করি জুডিশিয়াল কিলিংয়ের নামান্তর।’
এই মামলার নথি থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের সময় ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেন মার্চ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে খুলনা থেকে ট্রেনে করে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে তার যাত্রাবিরতি ও পথসভা করার কথা ছিল।
কিন্তু ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছালে শেখ হাসিনার বগি লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। তবে ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরবর্তীতে এ হামলার ঘটনায় রেল পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও শতাধিক ব্যক্তিকে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ আসামি হিসেবে দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তখনকার বিএনপি সরকারের সময়ে এ মামলার তদন্ত আটকে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পুলিশকে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে আসামি করে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। পরে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করে আদালত।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালত গত ৩ জুলাই ৪৭ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন।
পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের দেওয়া রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের ৩ লাখ এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয়জন হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকলেছুর রহমান, পাবনা জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক একেএম আখতারুজ্জামান আকতার, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি মোস্তফা নূরে আলম শ্যামল, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুবুল রহমান পলাশ, রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, শামছুল আলম, আজিজুর রহমান ভিপি শাহীন ও শহীদুল ইসলাম অটল। এদের মধ্যে জাকারিয়া পিন্টু পলাতক।
রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- ইসলাম হোসেন জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, আল আমিন, শিমু, আনিস শেখন, খোকন, নুরুল ইসলাম, আক্কেল আলী, সেলিম আহমেদ, মামুনুর রহমান, রবি, মামুন, তুহিন, এনাম, কল্লোল, কালা বাবু, লিটন, আবদুল্লাহ আল মামনু রিপন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, আবুল কালাম, আব্দুল হাকিম টেনু, আলমগীর হোসেন, পায়েল ও পলাশ ।
আর ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হলেন, এছাড়া আসামি তুহিন বিন ছিদ্দিক, দুলাল সরদার, ফজলুর রহমান, আব্দুল বারিক, আনোয়ার হোসেন জনি, রস্তম, মওলা, জামরুল, রাজু, বাবলু, বরকত, মুক্তা ও মুকুল।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও নথি হাইকোর্টে আসে।