কোনো নিয়ম, আইন, বাধা কিংবা নিষেধ কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। কোনো কিছু দিয়েই বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। একের পর এক ঘটেই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আমরা লক্ষ্য করেছি, গত দুই দিনে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এইতো গত শুক্রবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, এবারের ঈদযাত্রায় ২৩৭টি দুর্ঘটনায় মাত্র ১৩ দিনে সড়কে নিহত হয়েছে ২৫৯ জন মানুষ। আহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। যদিও এই সংখ্যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের থেকে নেয়া। কিন্তু প্রত্যন্ত দেশের অঞ্চলের অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যার খবর গণমাধ্যমে আসে না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি যেদিন এই সড়কের এই ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করে ঠিক তার আগের দিনই ভয়াবহ এক খবরে যেন থমকে যায় দেশের মানুষ। সবাইকে স্পর্শ করে যায় এক বছরের শিশু আকিফার মৃত্যুর ঘটনা। কুষ্টিয়ায় থেমে থাকা একটি বাস হঠাৎ চালিয়ে দেয়া হয়। ওই সময় আকিফাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন তার মা। সেই বাসের ধাক্কায় শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে শেষ আশ্রয় হয় তার।
অথচ একমাস অাগে রাজধানীতে শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়ক চেয়ে রাজপথে নেমেছিল ছাত্ররা। কয়েকদিন রাস্তায় থেকে শৃঙ্খলা কাকে বলে; তা আমাদের চোখে অাঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের সব চাওয়া মেনে হয়েছে- এমন দাবি করে সরকার শেষ পর্যন্ত তাদেরকে পড়ার টেবিলে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী দেখলাম আমরা? সেই পুরনো রূপের সড়ক, সেই বিশৃঙ্খলা অার মৃত্যুর মিছিল।
সড়ককে নিরাপদ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিচান রেখে মন্ত্রিসভায় চূড়ান্তু অনুমোদন দেওয়া হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’র খসড়া। কিন্তু তারপরও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
আমরা দেখলাম, ঈদের আগে ঘটা বড় বড় কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে দেয় সরকার। এই পর্যন্তই। এর কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে প্রধান করে একটি ‘উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি’ গঠন করে দেয় সরকার। যে কমিটির দায়িত্ব সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা।
এরইমধ্যে ওই কমিটি সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সারাদেশের সড়ক, মহাসড়কগুলোকে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তাতে কী সড়ক দুর্ঘটনার মহামারি রোগ থেকে মুক্তি পাবে দেশ? আমরা তা মনে করি না। পরিবর্তন করতে হলে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। আমূল পাল্টে ফেলতে হবে সড়ক ব্যববস্থাপনা। এক্ষেত্রে চালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, গাড়ির মালিক থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে বাধ্য করতে হবে আইন মানতে। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিতে।
এইতো দুইদিন আগেও আমরা দেখলাম, একটি সড়ক দুর্ঘটনার দায়ে বুলগেরিয়া তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদিও সেই দুর্ঘটনায় তাদের সরাসরি দায় নেই, তবে দায় ছিল। তাই তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আমাদের দেশে এমন দিন কবে আসবে? কবে অামরা শুধু দায়িত্ব নয়, দায় নিতেও শিখবো। আমরা মনে করি তবেই অাসবে সড়কে শৃঙ্খলা।