ঈদুল আযহার সময়ে সারা দেশের মহাসড়কে ২৩৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫৯ জন নিহত ও ৯৬০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় প্রাণহানি কমেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
ঈদুল আযহার যাত্রা শুরুর দিন (১৬ আগস্ট) থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় রিপোর্টস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘ঈদ-উল-আযহায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮’ প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই ১৩ দিনে সংঘটিত দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২৯.১৮ শতাংশ বাস, ২৩.৬ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৬.৬ শতাংশ নসিমন-করিমন, ৫.৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১১.১৫ শতাংশ অটোরিকশা, ১৬.৭২ শতাংশ কার মাইক্রো মোটরসাইকেল এবং ৯.১৬ শতাংশ অন্যান্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩১.৩৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪.৩৫ শতাংশ পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৭.৫৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১.১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে, ১.২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেচিয়ে ও ৫.০২ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও ভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে চট্টগ্রামের সিটি গেইট এলাকায় রেজাউল করিম রনি নামে এক যুবককে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। ময়মনসিংহের নান্দাইলে লেগুনা ও সিএনজি অটো রিকশা থামিয়ে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করায় ৪ জন যাত্রীকে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
হতাহতের মধ্যে ১২ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ জন চিকিৎসক, ২ জন প্রকৌশলী, ২ জন সাংবাদিক, ২ জন শিক্ষক, ২০ জন শিক্ষার্থী, ৫৯ জন নারী, ৩৪ জন শিশু, ৪২ জন চালক-হেলপার, ও ৮ জন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী রয়েছে।
তবে পুলিশ, র্যাব, বিআরটিএ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকায় এবারের ঈদযাত্রা ঈদুল ফিতরের তুলনায় দুর্ঘটনা ১৪.৪৪ শতাংশ, প্রাণহানি ২৩.৫৯ শতাংশ এবং আহত ২৪.১১ শতাংশ কমেছে বলেও জানান তিনি ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সেফ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফোয়ারার সভাপতি ইকরাম আহমেদ, বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক।
জবাবদিহিতার অভাবকে’ সড়কের মূল সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বেশি কথা বলার কারণ আমাদের এখানে এমন কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে যেগুলোর অর্ধেক চাইলে এড়ানো যেত।”
এ সময় বক্তারা সড়ক দুর্ঘটনা রোধ কল্পে সুপারিশমালা প্রদান করেন। সুপারিশগুলো হতো হলো- সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় রোড সেফটি ইউনিট গঠন করে এ ইউনিট কর্তৃক নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা। নিয়মিত রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা।
মহাসড়কে ধীরগতি যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা। ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া। মহাসড়কে নসিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন করা।
ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত করা। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাত, আন্ডারপাস ও ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।