চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শুধু অ্যাটর্নি জেনারেলের নয়; সমগ্র জাতির এই ব্যথা

সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ ধাপেও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখে দুইপক্ষের রিভিউ আবেদন (রায় পুনর্বিবেচনা) খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্র এবং অাসামীপক্ষ আবেদন করে। তাতে একপক্ষ ফাঁসির দণ্ড বহাল চায়। আরেকপক্ষ চায় মুক্তি। আজকের রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন সে আদেশ সবার জন্য শিরোধার্য। তবে আমার মনে একটা ব্যথা রয়ে যাবে। সাঈদীর মতো একটা লোক তার যে দণ্ড পাওয়া উচিত ছিল, সেই দণ্ডটা সে পেলো না।’ শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রতিটি ব্যক্তির একটি ব্যক্তিগত আবেগ আছে। যুদ্ধাপরাধী যে কয়জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল তাদের ভেতরে সাঈদী হলো শিরোমনি। সবচেয়ে বেশি ধূর্ত। আমাদের দেশের জন্য এবং মানবসভ্যতার জন্য ক্ষতিকারক। অথচ সে লোকটার ফাঁসি হল না। এটা আমার দুঃখ।’ আমরাও আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কারণ সর্বোচ্চ আদালত আদেশ সবার জন্য শিরোধার্য। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই; এই মামলায় তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশনের দুর্বলতা ছিল। আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টরা তা একাধিকার প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন। যে কোন কারণেই হোক সাঈদীর মতো এতবড় অপরাধীর ক্ষেত্রে ঠিক যেভাবে তথ্য-উপাত্ত-প্রমাণ উপস্থাপন করার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি। মূলত ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে ফাঁসির রায় দিয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে তা শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়েও তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি তুলে ধরে বলা হয়, ‘তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগের বিষয়ে মমতাজ বেগমের করা এজাহার সংগ্রহের চেষ্টা করেনি। একইভাবে প্রসিকিউটররাও কোন পদক্ষেপ নেননি। প্রসিকিউটরদের দায়িত্ব ছিল যথাযথ আইনি সাক্ষ্য সংগ্রহ করা, এতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।’ তাই নিশ্চিত করেই বলা যায়, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কয়েকজন ব্যক্তির কারণে দেশের অন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা গেল না। এই ব্যথা শুধু অ্যাটর্নি জেনারেলেরই নয়; সমগ্র জাতিরও।